সোনার তরী
   ভালে সিন্দূরের টিপ, নয়নে কাজল,
   রক্তাম্বর পট্টবাস, সোনার আঁচল।
   শুধাইল দর্পণেরে— কহো সত্য করি
   ধরাতলে সব চেয়ে কে আজি সুন্দরী।
   উজ্জ্বল কনকপটে ফুটিয়া উঠিল
   সেই হাসিমাখা মুখ। হিংসায় লুটিল
   রানী শয্যার উপরে। কহিল কাঁদিয়া—
   বনে পাঠালেম তারে কঠিন বাঁধিয়া,
   এখনো সে মরিল না সতিনের মেয়ে,
   ধরাতলে রূপসী সে সবাকার চেয়ে!

 

   তার পরদিনে— আবার সাজিল সুখে
   নব অলংকারে; বিরচিল হাসিমুখে
   কবরী নূতন ছাঁদে বাঁকাইয়া গ্রীবা,
   পরিল যতন করি নবরৌদ্রবিভা
   নব পীতবাস। দর্পণ সম্মুখে ধরে
   শুধাইল মন্ত্র পড়ি— সত্য কহো মোরে
   ধরামাঝে সব চেয়ে কে আজি রূপসী।
   সেই হাসি সেই মুখ উঠিল বিকশি
   মোহনমুকুরে। রানী কহিল জ্বলিয়া—
   বিষফল খাওয়ালেম তাহারে ছলিয়া,
   তবুও সে মরিল না সতিনের মেয়ে,
   ধরাতলে রূপসী সে সকলের চেয়ে!

 

   তার পরদিনে রানী কনকরতনে
   খচিত করিল তনু অনেক যতনে।
   দর্পণেরে শুধাইল বহু দর্পভরে—
   সর্বশ্রেষ্ঠ রূপ কার বল্‌ সত্য করে।
   দুইটি সুন্দর মুখ দেখা দিল হাসি—
   রাজপুত্র রাজকন্যা দোঁহে পাশাপাশি
   বিবাহের বেশে। অঙ্গে অঙ্গে শিরা যত