দরোয়ান
সাহস কম; কোনো মতেই কুস্তিতে অগ্রসর হইতে চাহে না। কিন্তু কোনো কোনো দরোয়ানের গায়ে জোর কম থাকুক, এত প্রকার কুস্তির প্যাঁচ জানে যে, অপেক্ষাকৃত বলবানদেরও পাড়িয়া ফেলিতে পারে।

যাঁহারা দেউড়ির উন্নতি করিতে চান তাঁহারা দরোয়ানদের ভালো আহার দিবেন, মাঝে মাঝে ছুটি দিবেন, দিনরাত্রি অকর্মণ্য করিয়া রাখিবেন না, আর মদ খাইতে না দেন। আমরা যেরূপ শিশু-প্রকৃতি, যাহা তাহা বিশ্বাস করি, সকলই সমান চক্ষে দেখি; আমরা যে বিপদের দেশে আছি, নানা চরিত্রের, নানা ব্যবসায়ে লোকের মধ্যে বাস; এখানে ভালো দরোয়ান রাখা নিতান্তই আবশ্যক। তাহা ছাড়া, নিতান্ত স্বার্থপর হইয়া নিজের দরোয়ানকে যেন কেবলমাত্র নিজের কাজেই নিযুক্ত না রাখি, আবশ্যকমতো পরের সাহায্য করিতে দেওয়া সামাজিক কর্তব্য। আমাদের দেশে অতি পূর্বকালে পুলিসের পদ্ধতি ছিল। ব্রাহ্মণ ঋষি ইন্‌স্পেক্টরগণ নিজের নিজের কনস্টেবল লইয়া বাড়ি বাড়ি, রাস্তায় রাস্তায়, হাটে-বাজারে, চোর-ডাকাত তাড়াইয়া বেড়াইতেন। তাঁহাদের বেতন ছিল, ওই কাজেই তাঁহারা নিযুক্ত ছিলেন। কিন্তু ইহার একটু কুফল এই হয় যে, স্বার্থ-সাধন উদ্দেশে বা ভুল বুঝিয়া ইন্‌স্পেক্টরগণ যথার্থ ভদ্রলোকদের প্রতিও উৎপীড়ন করিতে পারেন। শুনা যায় তাঁহারা সেইরূপ অত্যাচার আরম্ভ করিয়াছিলেন, এই নিমিত্ত বৌদ্ধদলেরা খেপিয়া এমন পুলিস ঠেঙাইতে আরম্ভ করিয়াছিল যে, কন্‌স্টেবলগণ ত্রাহি ত্রাহি ডাক ছাড়িয়াছিল। কিন্তু বিদ্রোহী-দল বেশি দিন টিকিতে পারে নাই। অবশেষে তাহারা নির্বাসিত হইয়াছিল। আজকাল এরূপ পুলিসের পদ্ধতি নাই। সুতরাং সাধারণের উপকারার্থে সকলকেই নিজের নিজের দরোয়ানকে মাঝে মাঝে পুলিসের কাজে নিযুক্ত করা উচিত। দেশে এত শত প্রকার সিঁদেল চোর আছে, রাত্রিযোগে এমন পা টিপিয়া তাহারা গৃহে প্রবেশ করে যে, এরূপ না করিলে তাহাদের শাসন হইবার সম্ভাবনা নাই। আমার দরোয়ানটা রোগা হউক, যাহা হউক, তাহাকে এইরূপ অনরারি পুলিস কন্‌স্টেবলের কাজে নিযুক্ত করিয়াছি। অনেক সময়ে লড়াই করিয়া সে বেচারি পারিয়া উঠে না, বলবান দস্যুদের কাছ হইতে লাঠি খাইয়া অনেকবার অজ্ঞান হইয়া পড়িয়াছে, কিন্তু তথাপি তাহার উদ্যম ভঙ্গ হয় নাই।