গদ্যছন্দ

চীন-কবিতার তরজমা থেকে একটি দৃষ্টান্ত দেখাই।

স্বপ্ন দেখলুম, যেন চড়েছি কোনো উঁচু ডাঙায় ;

সেখানে চোখে পড়ল গভীর এক ইঁদারা।

চলতে চলতে কণ্ঠ আমার শুকিয়েছে ;

ইচ্ছে হল, জল খাই।

ব্যগ্র দৃষ্টি নামতে চায় ঠাণ্ডা সেই কুয়োর তলার দিকে।

ঘুরলেম চারদিকে, দেখলেম ভিতরে তাকিয়ে,

জলে পড়ল আমার ছায়া।

দেখি এক মাটির ঘড়া কালো সেই গহ্বরে ;

দড়ি নাই যে তাকে টেনে তুলি।

ঘড়াটা পাছে তলিয়ে যায়

এই ভেবে প্রাণ কেন এমন ব্যাকুল হল।

পাগলের মতো ছুটলেম সহায় খুঁজতে।

গ্রামে গ্রামে ঘুরি, লোক নেই একজনও,

কুকুরগুলো ছুটে আসে টুঁটি কামড়ে ধরতে।

কাঁদতে কাঁদতে ফিরে এলেম কুয়োর ধারে।

জল পড়ে দুই চোখ বেয়ে, দৃষ্টি হল অন্ধপ্রায়।

 

শেষকালে জাগলেম নিজেরই কান্নার শব্দে।

ঘর নিস্তব্ধ, স্তব্ধ সব বাড়ির লোক ;

বাতির শিখা নিবো-নিবো, তার থেকে সবুজ ধোঁয়া উঠছে,

তার আলো পড়ছে আমার চোখের জলে।

ঘণ্টা বাজল, রাতদুপুরের ঘণ্টা,

বিছানায় উঠে বসলুম, ভাবতে লাগলুম অনেক কথা।

 

মনে পড়ল, যে-ডাঙাটা দেখছি সে চাং-আনের কবরস্থান ;

তিনশো বিঘে পোড়ো জমি,

ভার ী মাটি তার, উঁচু-উঁচু সব ঢিবি ;

নিচে গভীর গর্তে মৃতদেহ শোওয়ানো।

শুনেছি, মৃত মানুষ কখনো-কখনো দেখা দেয় সমাধির বাইরে।

আজ আমার প্রিয় এসেছিল ইঁদারায় ডুবে-যাওয়া সেই ঘড়া,

তাই দুচোখ বেয়ে জল পড়ে আমার কাপড় গেল ভিজে।