সে
পিঠে। ডাইনে বাঁয়ে তার লেজের ঠেলায় জল উঠত কল্‌কলিয়ে। তিনপহর রাতে শোয়ালগুলো ডাঙায় দাঁড়িয়ে জিগেস করত, ক্যা হুয়া, ক্যা হুয়া! আমি বলতুম, চুপ রও, কুছ নেই হুয়া। এই যাত্রাপথে পেঁচা আর বাদুড়ের সঙ্গেও কিছু আপসে বন্দোবস্তের কথা ছিল। তাদের কাজে লাগাতুম। ভোর সাড়ে চারটের সময় শুকতারা নেমে পড়ত পশ্চিম - আকাশে, পূর্ব - আকাশে আলোর রেখায় দেখা দিত সকালবেলার তর্জনীতে সোনার আংটি থেকে ঠিক্‌রে - পড়া সংকেত। সদ্য - জেগে - ওঠা কাক তেঁতুলের ডালে বসে অস্থির হয়ে প্রশ্ন করত, কা - কা? আমি যেমনি বলতুম ‘কিচ্ছু না', অমনি দেখতে দেখতে সব যেত মিলিয়ে — তুমি জেগে উঠতে তোমার বিছানায়।

 

পুপুদিদি একটুখানি হেসে বললে, এই - যে আমার ছেলেমানুষির কাহিনীটি শোনা গেল — এটি এত ইনিয়ে - বিনিয়ে বলে তোমার কী আনন্দ হল। আমার হিংসুকে স্বভাব ছিল, এইটে জানাবার জন্যে তোমার এতই উৎসাহ! আর, আমাদের বিলিতিআমড়া গাছের পাকা আমড়াগুলো পেড়ে নিয়ে সুকুমারদাকে লুকিয়ে দিয়ে আসতুম, আমড়া সে ভালোবাসত বলে ; চুরির অপবাদটা হত আমার, আর ভোগ করত সে — সে কথাটা চেপে গেছ। সুকুমারদা নাহয় অঙ্কই ভালো কষত, কিন্তু আমার বেশ মনে আছে একদিন সে ‘অবধান' কথাটার মানে ভেবে পাচ্ছিল না, আমি স্লেটে লিখে আড় করে ধরে তাকে দেখিয়ে দিয়েছিলুম — এ কথাগুলো বুঝি তোমার গল্পের মধ্যে পড়ে না?

আমি বললুম, আমার খুশির কারণ এ নয় যে, মনের জ্বালায় তুমি সুকুমারদার যৌবরাজ্য মানতে চাও নি। তার উপরে তোমার হিংসের কারণ ছিল আমার উপর তোমার অনুরাগবশত — আমার আনন্দের স্মৃতি রয়েছে ঐখানেই।

আচ্ছা, তোমার অহংকার নিয়ে তুমি থাকো। একটা কথা তোমাকে জিগেস করি, সেই - যে তোমার নামহারা বানানো মানুষটি যাকে বলতে সে, তার হল কি।

আমি বললেম, তার বয়স বেড়ে গেছে।

ভালোই তো।

সে এখন চিন্তা করে, মাথায় তার দুঃসমস্যার ভিমরুলে চাক বেঁধেছে, তর্কে তার সঙ্গে পারবার জো নেই।

দেখছি আমারই প্যার‍্যাল্যাল লাইনেই চলেছে।

তা হতে পারে, কিন্তু গল্পের এলেকা ছাড়িয়ে গেছে। থেকে থেকে সে হাত মুঠো করে ঝেঁকে ঝেঁকে বলে উঠছে, শক্ত হতে হবে।

বলুক - না। শক্ত ছাঁদেই গল্প জমুক - না। চুমুক দিয়ে খাওয়া নেই হল, চিবিয়ে খাওয়া চলবে তো। হয়তো আমার পছন্দ হবে।

পাছে আক্কেল দাঁতের অভাবে কায়দা করতে না পার, এই ভয়ে অনেকদিন তাকে চুপ করিয়ে রেখেছি।

ইস! তোমার ভাবনা দেখে হাসি পায়। তুমি ঠাউরে রেখেছ, আমার যথেষ্ট বয়স হয় নি।

সর্বনাশ! এতবড়ো নিন্দে অতিবড়ো শত্রুও করতে পারবে না।

তা হলে ডাকো - না তাকে তোমার আসরে, তার বর্তমান মেজাজটা বুঝে নিই।

তাই সই।