কর্মফল
গায়ে হাত দিতে পারবে না। আঃ— তারা আমার জীবনটাকে একেবারে ছারখার করে দিলে, আর আমি মরেও তাদের কিছুই করতে পারলেম না। তাদের কোনো ক্ষতি হবে না— তারা সুখে থাকবে,তাদের দাঁতমাজা হতে আরম্ভ করে মশারি-ঝাড়া পর্যন্ত কোনো তুচ্ছ কাজটিও বন্ধ থাকবে না— অথচ আমার সূর্য-চন্দ্র-নক্ষত্রের সমস্ত আলোক এক ফুৎকারে নিবল— আমার নেলি— উঃ, ও নাম নয়।

ও কে ও! হরেন! সন্ধ্যার সময় বাগানে বার হয়েছে যে! বাপ-মাকে লুকিয়ে চুরি করে কাঁচা পেয়ারা পাড়তে এসেছে। ওর আকাঙ্ক্ষা ঐ কাঁচা পেয়ারার চেয়ে আর অধিক ঊর্ধ্বে চড়ে নি— ঐ গাছের নিচু ডালেই ওর অধিকাংশ সুখ ফলে আছে। পৃথিবীতে ওর জীবনের কী মূল্য। গাছের একটা কাঁচা পেয়ারা যেমন, এ সংসারে ওর কাঁচা জীবনটাই বা তার চেয়ে কী এমন বড়ো। এখনই যদি ছিন্ন করা যায় তবে জীবনের কত নৈরাশ্য হতে ওকে বাঁচানো যায় তা কে বলতে পারে। আর মাসিমা— ইঃ! একেবারে লুটাপুটি করতে থাকবে। আঃ!

ঠিক সময়টি, ঠিক স্থানটি, ঠিক লোকটি। হাতকে আর সামলাতে পাচ্ছি নে। হাতটাকে নিয়ে কী করি। হাতটাকে নিয়ে কি করা যায়।

ছড়ি লইয়া সতীশ সবেগে চারাগাছগুলিকে ক্রমাগত আঘাত করিতে লাগিল। তাহাতে তাহার উত্তেজনা ক্রমশ আরো বাড়িয়া উঠিতে লাগিল। অবশেষে নিজের হাতকে সে সবেগে আঘাত করিল; কিন্তু কোনো বেদনা বোধ করিল না। শেষে পকেটের ভিতর হইতে পিস্তল সংগ্রহ করিয়া লইয়া সে হরেনের দিকে সবেগে অগ্রসর হইতে লাগিল।

হরেন। ( চমকিয়া উঠিয়া ) এ কী! দাদা নাকি। তোমার দুটি পায়ে পড়ি দাদা, তোমার দুটি পায়ে পড়ি— বাবাকে বলে দিয়ো না।

সতীশ। ( চিৎকার করিয়া ) মেসোমশায়— মেসোমশায়— এইবেলা রক্ষা করো— আর দেরি কোরো না— তোমার ছেলেকে এখনো রক্ষা করো।

শশধর। ( ছুটিয়া আসিয়া ) কী হয়েছে সতীশ। কী হয়েছে।

সুকুমারী। ( ছুটিয়া আসিয়া ) কী হয়েছে, আমার বাছার কী হয়েছে।

হরেন। কিছুই হয়নি মা— কিছুই না— দাদা তোমাদের সঙ্গে ঠাট্টা করছেন।

সুকুমারী। এ কিরকম বিশ্রী ঠাট্টা। ছি ছি, সকলই অনাসৃষ্টি! দেখো দেখি। আমার বুক এখনো ধড়াস-ধড়াস করছে। সতীশ মদ ধরেছে বুঝি!

সতীশ। পালাও— তোমাদের ছেলেকে নিয়ে এখনই পালাও। নইলে তোমাদের রক্ষা নেই।

হরেনকে লইয়া ত্রস্তপদে সুকুমারীর পলায়ন


শশধর। সতীশ, অমন উতলা হোয়ো না। ব্যাপারটা কী বলো। হরেনকে কার হাত হতে রক্ষা করবার জন্য ডেকেছিলে।

সতীশ। আমার হাত হতে। ( পিস্তল দেখাইয়া ) এই দেখো মেসোমশায়।