পলাতকা

          আমি নইলে মিথ্যা হত সন্ধ্যাতারা ওঠা,

               মিথ্যা হত কাননে ফুল-ফোটা।

 

                   বাইশ বছর ধরে

     মনে ছিল বন্দী আমি অনন্তকাল তোমাদের এই ঘরে।

          দুঃখ তবু ছিল না তার তরে,

অসাড় মনে দিন কেটেছে, আরো কাটত আরো বাঁচলে পরে।

                   যেথায় যত জ্ঞাতি

          লক্ষ্মী ব ' লে করে আমার খ্যাতি ;

      এই জীবনে সেই যেন মোর পরম সার্থকতা —

          ঘরের কোণে পাঁচের মুখের কথা!

               আজকে কখন মোর

               কাটল বাঁধন-ডোর।

     জনম মরণ এক হয়েছে ওই যে অকূল বিরাট মোহানায়,

               ঐ অতলে কোথায় মিলে যায়

               ভাঁড়ার-ঘরের দেয়াল যত

                   একটু ফেনার মতো।

 

               এতদিনে প্রথম যেন বাজে

          বিয়ের বাঁশি বিশ্ব-আকাশ মাঝে।

তুচ্ছ বাইশ বছর আমার ঘরের কোণের ধুলায় পড়ে থাক।

          মরণ-বাসর ঘরে আমায় যে দিয়েছে ডাক

     দ্বারে আমার প্রার্থী সে যে, নয় সে কেবল প্রভু,

               হেলা আমায় করবে না সে কভু।

                   চায় সে আমার কাছে

     আমার মাঝে গভীর গোপন যে সুধারস আছে

               গ্রহতারার সভার মাঝখানে সে

ওই যে আমার মুখে চেয়ে দাঁড়িয়ে হোথায় রইল নির্নিমেষে।

                   মধুর ভুবন, মধুর আমি নারী,

          মধুর মরণ, ওগো আমার অনন্ত ভিখারি।

                   দাও, খুলে দাও দ্বার,

     ব্যর্থ বাইশ বছর হতে পার করে দাও কালের পারাবার।