কথা

‘ পাষাণে এই যে রাঙা দাগ, এ তোমার

আপন বাপের রক্ত। এইখানে তার

মুণ্ড ফেলেছিনু কেটে, না শুধিয়া ঋণ,

না দিয়া সময়। আজি আসিয়াছে দিন,

রে পাঠান, পিতার সুপুত্র হও যদি

খোলো তরবার — পিতৃঘাতকেরে বধি

উষ্ণ রক্ত - উপহারে করিবে তর্পণ

তৃষাতুর প্রেতাত্মার। ' বাঘের মতন

হুংকারিয়া লম্ফ দিয়া রক্তনেত্রে বীর

পড়িল গুরুর'পরে ; গুরু রহে স্থির

কাঠের মূর্তির মতো। ফেলি অস্ত্রখান

তখনি চরণে তাঁর পড়িল পাঠান।

কহিল, ‘ হে গুরুদেব, লয়ে শয়তানে

কোরো না এমনতরো খেলা। ধর্ম জানে

ভুলেছিনু পিতৃরক্তপাত ; একাধারে

পিতা গুরু বন্ধু বলে জেনেছি তোমারে

এতদিন। ছেয়ে থাক্‌ মনে সেই স্নেহ,

ঢাকা পড়ে হিংসা যাক মরে। প্রভু, দেহো

পদধূলি। ' এত বলি বনের বাহিরে

ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে গেল, না চাহিল ফিরে,

না থামিল একবার। দুটি বিন্দু জল

ভিজাইল গোবিন্দের নয়নযুগল।

 

 

পাঠান সেদিন হতে থাকে দূরে দূরে।

নিরালা শয়নঘরে জাগাতে গুরুরে

দেখা নাহি দেয় ভোরবেলা। গৃহদ্বারে

অস্ত্র হাতে নাহি থাকে রাতে। নদীপারে

গুরু - সাথে মৃগয়ায় নাহি যায় একা।

নির্জনে ডাকিলে গুরু দেয় না সে দেখা।