সোনার তরী

সেইমতো সিন্ধুতটে                 ধূলিমাথা দীর্ঘজটে

        খ্যাপা খুঁজে খুঁজে ফিরে পরশপাথর।

 

        একদা শুধাল তারে গ্রামবাসী ছেলে,

‘ সন্ন্যাসীঠাকুর, এ কী,          কাঁকালে ও কী ও দেখি,

        সোনার শিকল তুমি কোথা হতে পেলে। '

সন্ন্যাসী চমকি ওঠে                শিকল সোনার বটে,

        লোহা সে হয়েছে সোনা জানে না কখন।

একি কাণ্ড চমৎকার,             তুলে দেখে বার বার,

        আঁখি কচালিয়া দেখে এ নহে স্বপন।

কপালে হানিয়া কর                বসে পড়ে ভূমি- ' পর,

        নিজেরে করিতে চাহে নির্দয় লাঞ্ছনা ;

পাগলের মতো চায় —            কোথা গেল, হায় হায়,

        ধরা দিয়ে পলাইল সফল বাঞ্ছনা।

কেবল অভ্যাসমত                   নুড়ি কুড়াইত কত,

        ঠন্‌ ক ' রে ঠেকাইত শিকলের ‘ পর,

চেয়ে দেখিত না, নুড়ি           দূরে ফেলে দিত ছুঁড়ি,

        কখন ফেলেছে ছুঁড়ে পরশপাথর।

 

        তখন যেতেছে অস্তে মলিন তপন।

আকাশ সোনার বর্ণ               সমুদ্র   গলিত স্বর্ণ,

       পশ্চিমদিগ্বধূ দেখে সোনার স্বপন।

সন্ন্যাসী আবার ধীরে                পূর্বপথে যায় ফিরে

        খুঁজিতে নূতন ক ' রে হারানো রতন।

সে শকতি নাহি আর                  নুয়ে পড়ে দেহভার

        অন্তর লুটায় ছিন্ন তরুর মতন।

পুরাতন দীর্ঘ পথ                   পড়ে আছে মৃতবৎ

        হেথা হতে কত দূর নাহি তার শেষ।

দিক হতে দিগন্তরে                মরুবালি ধূ ধূ করে,

        আসন্ন রজনী-ছায়ে ম্লান সর্বদেশ।

অর্ধেক জীবন খুঁজি               কোন্‌ ক্ষণে চক্ষু বুজি

        স্পর্শ লভেছিল যার এক পলভর,

বাকি অর্ধ ভগ্ন প্রাণ               আবার করিছে দান

        ফিরিয়া খুঁজিতে সেই পরশপাথর।