সোনার তরী
              শুধু নিজ হৃদয়ের স্নেহ-অধিকার
              প্রচারিল — ‘ যেতে আমি দিব না তোমায় '।
              তবুও সময় হল শেষ, তবু হায়
              যেতে দিতে হল।
   
   
                                  ওরে মোর মূঢ় মেয়ে,
              কে রে তুই, কোথা হতে কী শকতি পেয়ে
              কহিলি এমন কথা, এত স্পর্ধাভরে —
             ‘ যেতে আমি দিব না তোমায় '? চরাচরে
              কাহারে রাখিবি ধরে দুটি ছোটো হাতে
              গরবিনী, সংগ্রাম করিবি কার সাথে
              বসি গৃহদ্বারপ্রান্তে শ্রান্ত ক্ষুদ্র দেহ
              শুধু লয়ে ওইটুকু বুকভরা স্নেহ।
              ব্যথিত হৃদয় হতে বহু ভয়ে লাজে
              মর্মের প্রার্থনা শুধু ব্যক্ত করা সাজে
              এ জগতে, শুধু বলে রাখা ' যেতে দিতে
              ইচ্ছা নাহি '। হেন কথা কে পারে বলিতে
             ‘ যেতে নাহি দিব '! শুনি তোর শিশুমুখে
              স্নেহের প্রবল গর্ববাণী, সকৌতুকে
              হাসিয়া সংসার টেনে নিয়ে গেল মোরে,
              তুই শুধু পরাভূত চোখে জল ভরে
              দুয়ারে রহিলি বসে ছবির মতন,
              আমি দেখে চলে এনু মুছিয়া নয়ন।
   
   
               চলিতে চলিতে পথে হেরি দুই ধারে
               শরতের শস্যক্ষেত্র নত শস্যভারে
               রৌদ্র পোহাইছে। তরুশ্রেণী উদাসীন
                রাজপথপাশে, চেয়ে আছে সারাদিন
               আপন ছায়ার পানে। বহে খরবেগ
               শরতের ভরা গঙ্গা। শুভ্র খণ্ডমেঘ