সোনার তরী
                 ‘ দিব না দিব না যেতে ' — নাহি শুনে কেউ
                   নাহি কোনো সাড়া।
   
                                     চারি দিক হতে আজি
                   অবিশ্রাম কর্ণে মোর উঠিতেছে বাজি
                   সেই বিশ্ব-মর্মভেদী করুণ ক্রন্দন
                   মোর কন্যাকণ্ঠস্বরে ; শিশুর মতন
                   বিশ্বের অবোধ বাণী। চিরকাল ধরে
                   যাহা পায় তাই সে হারায়, তবু তো রে
                   শিথিল হল না মুষ্টি, তবু অবিরত
                   সেই চারি বৎসরের কন্যাটির মতো
                   অক্ষুণ্ন প্রেমের গর্বে কহিছে সে ডাকি
                  ‘ যেতে নাহি দিব '। ম্লান মুখ, অশ্রু-আঁখি,
                   দণ্ডে দণ্ডে পলে পলে টুটিছে গরব,
                   তবু প্রেম কিছুতে না মানে পরাভব,
                   তবু বিদ্রোহের ভাবে রুদ্ধ কণ্ঠে কয়
                  ‘ যেতে নাহি দিব '। যত বার পরাজয়
                       তত বার কহে, ‘ আমি ভালোবাসি যারে
                    সে কি কভু আমা হতে দূরে যেতে পারে।
                   আমার আকাঙ্ক্ষা-সম এমন আকুল,
                   এমন সকল-বাড়া, এমন অকূল,
                   এমন প্রবল বিশ্বে কিছু আছে আর! '
                   এত বলি দর্পভরে করে সে প্রচার
                  ‘ যেতে নাহি দিব '। তখনি দেখিতে পায়,
                   শুষ্ক তুচ্ছ ধূলি-সম উড়ে চলে যায়
                   একটি নিশ্বাসে তার আদরের ধন ;
                   অশ্রুজলে ভেসে যায় দুইটি নয়ন,
                   ছিন্নমূল তরু-সম পড়ে পৃথ্বীতলে
                   হতগর্ব নতশির। তবু প্রেম বলে,
                   ‘ সত্যভঙ্গ হবে না বিধির। আমি তাঁর
                   পেয়েছি স্বাক্ষর-দেওয়া মহা অঙ্গীকার
                   চির-অধিকার-লিপি। ' — তাই স্ফীত বুকে