পরিশেষ

কতবার পরাভব, কতবার কত লজ্জা ভয়,

          তবু কণ্ঠে ধ্বনিয়াছে অসীমের জয়।

অসম্পূর্ণ সাধনায় ক্ষণে ক্ষণে ক্রন্দিত আত্মার

          খুলে গেছে অবরুদ্ধ দ্বার।

 

লভিয়াছি জীবলোকে মানবজন্মের অধিকার,

          ধন্য এই সৌভাগ্য আমার।

যেথা যে অমৃতধারা উৎসারিল যুগে যুগান্তরে

          জ্ঞানে কর্মে ভাবে, জানি সে আমার ই তরে।

পূর্ণের যে কোনো ছবি মোর প্রাণে উঠেছে উজ্জ্বলি

          জানি তাহা সকলের বলি।

 

ধূলির আসনে বসি ভূমারে দেখেছি ধ্যানচোখে

          আলোকের অতীত আলোকে।

অণু হতে অণীয়ান মহৎ হইতে মহীয়ান,

          ইন্দ্রিয়ের পারে তার পেয়েছি সন্ধান।

ক্ষণে ক্ষণে দেখিয়াছি দেহের ভেদিয়া যবনিকা

          অনির্বাণ দীপ্তিময়ী শিখা।

 

যেখানেই যে-তপস্বী করেছে দুষ্কর যজ্ঞযাগ,

          আমি তার লভিয়াছি ভাগ।

মোহবন্ধমুক্ত যিনি আপনারে করেছেন জয়,

          তাঁর মাঝে পেয়েছি আমার পরিচয়।

যেখানে নিঃশঙ্ক বীর মৃত্যুরে লঙ্ঘিল অনায়াসে,

          স্থান মোর সেই ইতিহাসে।

 

শ্রেষ্ঠ হতে শ্রেষ্ঠ যিনি, যতবার ভুলি কেন নাম,

          তবু তাঁরে করেছি প্রণাম।

অন্তরে লেগেছে মোর স্তব্ধ আকাশের   আশীর্বাদ ;

          উষালোকে আনন্দের পেয়েছি প্রসাদ।

এ আশ্চর্য বিশ্বলোকে জীবনের বিচিত্র গৌরবে

           মৃত্যু মোর পরিপূর্ণ হবে।