শেষের কবিতা

               শিরে হস্ত হেনে
         একে একে নিবে মেনে
         ক্রোধে ক্ষোভে ভয়ে
            লোকালয়ে
      অপরিচিতের জয়,
         অপরিচিতের পরিচয়—
               যে অপরিচিত
      বৈশাখের রুদ্র ঝড়ে বসুন্ধরা করে আন্দোলিত,
               হানি বজ্রমুঠি
            মেঘের কার্পণ্য টুটি
            সংগোপন বর্ষণসঞ্চয়
         ছিন্ন ক’রে মুক্ত করে সর্বজগন্ময়॥


রবি ঠাকুরের দল সেদিন চুপ করে গেল। শাসিয়ে গেল, লিখে জবাব দেবে। সভাটাকে হতবুদ্ধি করে দিয়ে মোটরে করে অমিত যখন বাড়ি আসছিল সিসি তাকে বললে, “একখানা আস্ত নিবারণ চক্রবর্তী তুমি নিশ্চয় আগে থাকতে গড়ে তুলে পকেটে করে নিয়ে এসেছ, কেবলমাত্র ভালোমানুষদের বোকা বানাবার জন্যে।”

অমিত বললে, “অনাগতকে যে মানুষ এগিয়ে নিয়ে আসে তাকেই বলে অনাগত-বিধাতা। আমি তাই। নিবারণ চক্রবর্তী আজ মর্তে এসে পড়ল, কেউ তাকে আর ঠেকাতে পারবে না।”

সিসি অমিতকে নিয়ে মনে মনে খুব একটা গর্ব বোধ করে। সে বললে, “আচ্ছা অমিত, তুমি কি সকালবেলা উঠেই সেদিনকার মতো তোমার যত শানিয়ে-বলা কথা বানিয়ে রেখে দাও?”

অমিত বললে, “সম্ভবপরের জন্যে সব সময়েই প্রস্তুত থাকাই সভ্যতা; বর্বরতা পৃথিবীতে সকল বিষয়েই অপ্রস্তুত। এ কথাটাও আমার নোটবইয়ে লেখা আছে।”

“কিন্তু তোমার নিজের মত বলে কোনো পদার্থই নেই; যখন যেটা বেশ ভালো শোনায় সেইটেই তুমি বলে বস।”

“আমার মনটা আয়না, নিজের বাঁধা মতগুলো দিয়েই চিরদিনের মতো যদি তাকে আগাগোড়া লেপে রেখে দিতুম তা হলে তার উপরে প্রত্যেক চলতি মুহূর্তের প্রতিবিম্ব পড়ত না।”

সিসি বললে, “অমি, প্রতিবিম্ব নিয়েই তোমার জীবন কাটবে।”