ছড়া
হুইস্‌ল্‌ বাজে ইস্টিসনে, বরের জ্যাঠামশাই
চমকে ওঠে—গেলেন কোথায় অগ্রদ্বীপের গোঁসাই।
সাঁৎরাগাছির নাচনমণি কাটতে গেল সাঁতার,
হায় রে কোথায় ভাসিয়ে দিল সোনার সিঁথি মাথার।
মোষের শিঙে ব’সে ফিঙে লেজ দুলিয়ে নাচে—
শুধোয় নাচন, সিঁথি আমার নিয়েছে কোন্‌ মাছে।
মাছের লেজের ঝাপটা লাগে, শালুক ওঠে দুলে;
রোদ পড়েছে নাচনমণির ভিজে চিকন চুলে।
কোথায় ঘাটের ফাটল থেকে ডাকল কোলাব্যাঙ,
খড়গপুরের ঢাকে ঢোলে বাজল ড্যাড্যাঙ ড্যাঙ।
কাঁপছে ছায়া আঁকাবাঁকা, কলমিপাড়ের পুকুর—
জল খেতে যায় এক-পা-কাটা তিনপেয়ে এক কুকুর।
হুইস্‌ল্‌ বাজে, আছে সেজে পাইকপাড়ার পাত্রী,
শেয়ালকাঁটার বন পেরিয়ে চলে বিয়ের যাত্রী।

গ্যাঁগোঁ করে রেডিয়োটা কে জানে কার জিত—

মেশিন্‌গানে গুঁড়িয়ে দিল সভ্যবিধির ভিত।

টিয়ের মুখের বুলি শুনে হাসছে ঘরে পরে—

রাধে কৃষ্ণ, রাধে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে।


দিন চলে যায় গুন্‌গুনিয়ে ঘুমপাড়ানির ছড়া,
শানবাঁধনো ঘাটের ধারে নামছে কাঁখের ঘড়া।
আতাগাছের তোতাপাখি, ডালিমগাছে মৌ,
হীরেদাদার মড়মড়ে থান, ঠাকুরদাদার বউ।
পুকুরপাড়ে জলের ঢেউয়ে দুলছে ঝোপের কেয়া,
পাটনি চালায় ভাঙা ঘাটে তালের ডোঙার খেয়া।
খোকা গেছে মোষ চরাতে, খেতে গেছে ভুলে,
কোথায় গেল গমের রুটি শিকের ‘পরে তুলে।
আমার ছড়া চলেছে আজ রূপকথাটা ঘেঁষে,
কলম আমার বেরিয়ে এল বহুরূপীর বেশে।
আমরা আছি হাজার বছর ঘুমের ঘোরের গাঁয়ে,
আমরা ভেসে বেড়াই স্রোতের শেওলা-ঘেরা নায়ে।