বীথিকা

                ২

 

জনশূন্য ভাঙাঘাটে আজি বৃদ্ধ বটচ্ছায়াতলে

গোধূলির শেষ আলো আষাঢ়ে ধূসর নদীজলে

মগ্ন হল। ওপারের লোকালয় মরীচিকাসম

চক্ষে ভাসে। একা বসে দেখিতেছি মনে মনে, মম

দূর আপনার ছবি নাট্যের প্রথম অঙ্কভাগে

কালের লীলায়। সেদিনের সদ্য - জাগা চক্ষে জাগে

অস্পষ্ট কী প্রত্যাশার অরুণিম প্রথম উন্মেষ ;

সম্মুখে সে চলেছিল, না জানিয়া শেষের উদ্দেশ,

নেপথ্যের প্রেরণায়। জানা না - জানার মধ্যসেতু

নিত্য পার হতেছিল কিছু তার না বুঝিয়া হেতু।

অকস্মাৎ পথমাঝে কে তারে ভেটিল একদিন,

দুই অজানার মাঝে দেশকাল হইল বিলীন

সীমাহীন নিমেষেই ; পরিব্যাপ্ত হল জানাশোনা

জীবনের দিগন্ত পারায়ে। ছায়ায় - আলোয় - বোনা

আতপ্ত ফাল্গুনদিনে মর্মরিত চাঞ্চল্যের স্রোতে

কুঞ্জপথে মেলিল সে স্ফুরিত অঞ্চলতল হতে

কনকচাঁপার আভা। গন্ধে শিহরিয়া গেল হাওয়া

শিথিল কেশের স্পর্শে। দুজনে করিল আসাযাওয়া

অজানা অধীরতায়।

                             সহসা রাত্রে সে গেল চলি

যে রাত্রি হয় না কভু ভোর। অদৃষ্টের যে অঞ্জলি

এনেছিল সুধা, নিল ফিরে। সেই যুগ হল গত

চৈত্রশেষে অরণ্যের মাধবীর সুগন্ধের মতো।

তখন সেদিন ছিল সবচেয়ে সত্য এ ভুবনে,

সমস্ত বিশ্বের যন্ত্র বাঁধিত সে আপন বেদনে

আনন্দ ও বিষাদের সুরে। সেই সুখ দুঃখ তার

জোনাকির খেলা মাত্র, যারা সীমাহীন অন্ধকার

পূর্ণ করে চুম্‌কির কাজে বিঁধে আলোকের সূচি ;

সে রাত্রি অক্ষত থাকে, বিনা চিহ্নে আলো যায় ঘুচি।