পুনরাবৃত্তি

কৌশিক যেদিন তাঁর পাঠশালায় এল সেদিন অধ্যাপকের মন প্রসন্ন হল না। অন্য সকলেও লজ্জা পেলে। কিন্তু, রাজার ইচ্ছা।

সকলের চেয়ে সংকট রুচিরার। কেননা, ছেলেরা কানাকানি করে। লজ্জায় তার মুখ লাল হয়, রাগে তার চোখ দিয়ে জল পড়ে।

কৌশিক যদি কখনো তাকে পুঁথি এগিয়ে দেয় সে পুঁথি ঠেলে ফেলে। যদি তাকে পাঠের কথা বলে সে উত্তর করে না।

রুচির প্রতি অধ্যাপকের স্নেহের সীমা ছিল না। কৌশিককে সকল বিষয়ে সে এগিয়ে যাবে এই ছিল তাঁর প্রতিজ্ঞা, রুচিরও সেই ছিল পণ।

মনে হল, সেটা খুব সহজেই ঘটবে, কারণ কৌশিক পড়ে বটে কিন্তু একমনে নয়। তার সাঁতার কাটতে মন, তার বনে বেড়াতে মন, সে গান করে, সে যন্ত্র বাজায়।

অধ্যাপক তাকে ভর্ৎসনা করে বলেন, “বিদ্যায় তোমার অনুরাগ নেই কেন।”

সে বলে, “আমার অনুরাগ শুধু বিদ্যায় নয়, আরও নানা জিনিসে।”

অধ্যাপক বলেন, “সে-সব অনুরাগ ছাড়ো।”

সে বলে, “তা হলে বিদ্যার প্রতিও আমার অনুরাগ থাকবে না।”


এমনি করে কিছু কাল যায়।

রাজা অধ্যাপককে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমার ছাত্রের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে।”

অধ্যাপক বললেন, “রুচিরা।”

রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “আর কৌশিক? ”

অধ্যাপক বললেন, “সে যে কিছুই শিখেছে এমন বোধ হয় না।”

রাজা বললেন, “আমি কৌশিকের সঙ্গে রুচির বিবাহ ইচ্ছা করি।”

অধ্যাপক একটু হাসলেন; বললেন, “এ যেন গোধূলির সঙ্গে উষার বিবাহের প্রস্তাব।”

রাজা মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, “তোমার কন্যার সঙ্গে কৌশিকের বিবাহে বিলম্ব উচিত নয়।”

মন্ত্রী বললে, “মহারাজ, আমার কন্যা এ বিবাহে অনিচ্ছুক।”

রাজা বললেন, “স্ত্রীলোকের মনের ইচ্ছা কি মুখের কথায় বোঝা যায়।”

মন্ত্রী বললে, “তার চোখের জলও যে সাক্ষ্য দিচ্ছে।”

রাজা বললেন, “সে কি মনে করে কৌশিক তার অযোগ্য।”

মন্ত্রী বললে, “হাঁ, সেই কথাই বটে।”

রাজা বললেন, “আমার সামনে দুজনের বিদ্যার পরীক্ষা হোক। কৌশিকের জয় হলে এই বিবাহ সম্পন্ন হবে।”

পরদিন মন্ত্রী রাজাকে এসে বললে, “এই পণে আমার কন্যার মত আছে।”