সমস্যা
গোঁড়ামির কার্য। যদি কোন সম্প্রদায় এমন আইন জারি করেন, তাঁহাদের দলের সমুদয় লোককেই অবস্থানির্বিচারে বাল্যবিবাহ পরিহার করিতেই হইবে, বিধবাবিবাহ দিতেই হইবে, অবরোধপ্রথা ভাঙিতেই হইবে, তবে তাহাতে সমাজের অপকার হইতে পারে। মূল ধর্মনীতিসমূহের ন্যায় সমাজনীতি সকল অবস্থায় সকল লোকের পক্ষে উপযোগী না হইতে পারে। পরিবারবিশেষে বাল্যবিবাহ উঠিয়া গেলেও হানি নাই, কিন্তু সকল পরিবারেই এ কথা খাটে না। পরিবারবিশেষে বিধবাবিবাহ হইবার সুবিধা আছে, কিন্তু সকল পরিবারে নাই। স্ত্রীবিশেষ স্বাধীনতার উপযোগী কিন্তু সকল স্ত্রী নহে। যাঁহারা বলপূর্ব্বক সমাজে একটা বিশৃঙ্খলা জন্মাইয়া দিতে চান, তাঁহারা যতই স্ফীত হউন না কেন, তাঁহাদিগকে সমাজের গাত্রে একটি সুমহৎ ক্ষত বলিয়া গণ্য করা যাইতে পারে। সকল অবস্থাতেই আইনপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধ করিলে সমাজে দুর্নীতি প্রশয় পাইতে পারে। অবস্থানির্বিচারে বিবাহার্থিনী বিধবা মাত্রেই বিবাহ দিতে গেলে অস্বাস্থ্যজনক উচ্ছ্বঙ্খলতা উপস্থিত হয়। স্ত্রী মাত্রেরই স্বাধীনতা দিতে গেলেই বঙ্গীয়সমাজকে অপদস্ত হইতে হয়। তেমনি আবার বাল্যবিবাহই একমাত্র নিয়ম বলিয়া অবলম্বন করা, সকল অবস্থাতেই সকল বিধবার স্কন্ধেই বলপূর্ব্বক ব্রক্ষ্মচর্য্য বোঝা চাপাইয়া দেওয়া এবং স্ত্রীলোকদিগকে কোন মতেই এবং কোন কালেই অন্তঃপুরের বাহিরে আনিবার চেষ্টা না করা অত্যন্ত অন্ধপ্রথাঞ্চলবর্ত্তিতার পরিচায়ক। অতএব এই সকল সমস্যার প্রতি মনোযোগ করিয়া এক প্রকার গোঁয়ার্তমি গোঁড়ামি পরিত্যাগ কর। শান্ত সংযতভাবে সমাজসংস্কারের প্রতি মন দাও। অথচ বাঁধন ছিঁড়িবার উপলক্ষে তুচ্ছতর সাম্প্রদায়িক বাঁধনে সমাজের পঙ্গুদেহ জড়াইও না।