ভুল স্বর্গ

“আহা, তোমার হাতে বুঝি কাজ নেই? ”

নিশ্বাস ছেড়ে বেকার বললে, “কাজ করব তার সময় নেই।”

মেয়েটি ওর কথা কিছুই বুঝতে পারলে না। বললে, “আমার হাত থেকে কিছু কাজ নিতে চাও? ”

বেকার বললে, “তোমার হাত থেকেই কাজ নেব ব’লে দাঁড়িয়ে আছি।”

“কী কাজ দেব।”

“তুমি যে ঘড়া কাঁখে জল তুলে নিয়ে যাও তারই একটি যদি আমাকে দিতে পার।”

“ঘড়া নিয়ে কী হবে। জল তুলবে? ”

“না, আমি তার গায়ে চিত্র করব।”

মেয়েটি বিরক্ত হয়ে বললে, “আমার সময় নেই, আমি চললুম।”

কিন্তু বেকার লোকের সঙ্গে কাজের লোক পারবে কেন। রোজ ওদের উৎসতলায় দেখা হয় আর রোজ সেই একই কথা, “তোমার কাঁখের একটি ঘড়া দাও, তাতে চিত্র করব।”

হার মানতে হল, ঘড়া দিলে।

সেইটিকে ঘিরে ঘিরে বেকার আঁকতে লাগল কত রঙের পাক, কত রেখার ঘর।

আঁকা শেষ হলে মেয়েটি ঘড়া তুলে ধরে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলে। ভুরু বাঁকিয়ে জিজ্ঞাসা করল, “এর মানে? ”

বেকার লোকটি বললে, “এর কোনো মানে নেই।”

ঘড়া নিয়ে মেয়েটি বাড়ি গেল।

সবার চোখের আড়ালে বসে সেটিকে সে নানা আলোতে নানা রকমে হেলিয়ে ঘুরিয়ে দেখলে। রাত্রে থেকে থেকে বিছানা ছেড়ে উঠে দীপ জ্বেলে চুপ করে বসে সেই চিত্রটা দেখতে লাগল। তার বয়সে এই সে প্রথম এমন কিছু দেখেছে যার কোনো মানে নেই।

তার পরদিন যখন সে উৎসতলায় এল তখন তার দুটি পায়ের ব্যস্ততায় একটু যেন বাধা পড়েছে। পা দুটি যেন চলতে চলতে আন্‌মনা হয়ে ভাবছে— যা ভাবছে তার কোনো মানে নেই।

সেদিনও বেকার মানুষ এক পাশে দাঁড়িয়ে।

মেয়েটি বললে, “কী চাও।”

সে বললে, “তোমার হাত থেকে আরো কাজ চাই।”

“কী কাজ দেব।”

“যদি রাজি হও, রঙিন সুতো বুনে বুনে তোমার বেণী বাঁধবার দড়ি তৈরি করে দেব।”

“কী হবে।”

“কিছুই হবে না।”

নানা রঙের নানা-কাজ-করা দড়ি তৈরি হল। এখন থেকে আয়না হাতে নিয়ে বেণী বাঁধতে মেয়ের অনেক সময় লাগে। কাজ পড়ে থাকে, বেলা বয়ে যায়।