তোতাকাহিনী
ঠোঁট দিয়া খাঁচার শলা কাটিবার চেষ্টায় আছে।

কোতোয়াল বলিল, “এ কী বেয়াদবি!”

তখন শিক্ষামহালে হাপর হাতুড়ি আগুন লইয়া কামার আসিয়া হাজির। কী দমাদ্দম পিটানি! লোহার শিকল তৈরি হইল, পাখির ডানাও গেল কাটা।

রাজার সম্বন্ধীরা মুখ হাঁড়ি করিয়া মাথা নাড়িয়া বলিল, “এ রাজ্যে পাখিদের কেবল যে আক্কেল নাই তা নয়, কৃতজ্ঞতাও নাই।”

তখন পণ্ডিতেরা এক হাতে কলম, এক হাতে সড়কি লইয়া এমনি কাণ্ড করিল যাকে বলে শিক্ষা।

কামারের পসার বাড়িয়া কামারগিন্নির গায়ে সোনাদানা চড়িল এবং কোতোয়ালের হুঁশিয়ারি দেখিয়া রাজা তাকে শিরোপা দিলেন।


পাখিটা মরিল। কোন্‌কালে যে, কেউ তা ঠাহর করিতে পারে নাই। নিন্দুক লক্ষ্মীছাড়া রটাইল, “পাখি মরিয়াছে।”

ভাগিনাকে ডাকিয়া রাজা বলিলেন, “ভাগিনা, এ কী কথা শুনি।”

ভাগিনা বলিল, “মহারাজ, পাখিটার শিক্ষা পুরা হইয়াছে।”

রাজা শুধাইলেন, “ও কি আর লাফায়।”

ভাগিনা বলিল, “আরে রাম! ”

“আর কি ওড়ে।”

“না।”

“আর কি গান গায়।”

“না।”

“দানা না পাইলে আর কি চেঁচায়।”

“না।”

রাজা বলিলেন, “একবার পাখিটাকে আনো তো, দেখি।”

পাখি আসিল। সঙ্গে কোতোয়াল আসিল, পাইক আসিল, ঘোড়সওয়ার আসিল। রাজা পাখিটাকে টিপিলেন, সে হাঁ করিল না, হুঁ করিল না। কেবল তার পেটের মধ্যে পুঁথির শুকনো পাতা খস্‌খস্‌ গজ্‌গজ্‌ করিতে লাগিল।

বাহিরে নববসন্তের দক্ষিণহাওয়ায় কিশলয়গুলি দীর্ঘনিশ্বাসে মুকুলিত বনের আকাশ আকুল করিয়া দিল।