প্রকল্প সম্বন্ধেপ্রকল্প রূপায়ণেরবীন্দ্র-রচনাবলীজ্ঞাতব্য বিষয়পাঠকের চোখেআমাদের লিখুনডাউনলোডঅন্যান্য রচনা-সম্ভার |
একটুখানি বুঝিয়ে বলো — কী করছেন তাঁরা। হাল নিয়মে চাষবাস করছেন?
একেবারে উলটো, চাষের সম্পর্ক নেই।
আহারের কী ব্যবস্থা।
একেবারেই বন্ধ।
প্রাণটা?
সেই চিন্তাটাই সব চেয়ে তুচ্ছ। পাকযন্ত্রের বিরুদ্ধে ওঁদের সত্যাগ্রহ। বলছেন, ঐ জঠরযন্ত্রটার মতো প্যাঁচাও জিনিস আর নেই। যত রোগ, যত যুদ্ধবিগ্রহ, যত চুরি - ডাকাতির মূল কারণ তার নাড়ীতে নাড়ীতে।
দাদা, কথাটা সত্য হলেও হজম করা শক্ত।
তোমার পক্ষে শক্ত। কিন্তু, ওঁরা হলেন বৈজ্ঞানিক। পাকযন্ত্রটা উপড়ে ফেলেছেন, পেট গেছে চুপ্সে, আহার বন্ধ, নস্য নিচ্ছেন কেবলই। নাক দিয়ে পোষ্টাই নিচ্ছেন হাওয়ায় শুষে। কিছু পৌঁচচ্ছে ভিতরে, কিছু হাঁচতে হাঁচতে বেরিয়ে যাচ্ছে। দুই কাজ একসঙ্গেই চলছে, দেহটা সাফও হচ্ছে, ভর্তিও হচ্ছে।
আশ্চর্য কৌশল। কলের জাঁতা বসিয়েছেন বুঝি? হাঁস মুরগি পাঁটা ভেড়া আলু পটোল একসঙ্গে পিষে শুকিয়ে ভর্তি করছেন ডিবের মধ্যে?
না। পাকযন্ত্র, কসাইখানা, দুটোই সংসার থেকে লোপ করা চাই। পেটের দায়, বিল - চোকানোর ল্যাঠা একসঙ্গে মেটাবেন। চিরকালের মতো জগতে শান্তি স্থাপনার উপায় চিন্তা করছেন।
নস্যটা তবে শস্য নিয়েও নয়, কেননা সেটাতেও কেনাবেচার মামলা।
বুঝিয়ে বলি। জীবলোকে উদ্ভিদের সবুজ অংশটাই প্রাণের গোড়াকার পদার্থ, সেটা তো জান?
পাপমুখে কেমন করে বলব যে জানি, কিন্তু বুদ্ধিমানেরা নিতান্ত যদি জেদ করেন তা হলে মেনে নেব।
দ্বৈপায়ন পণ্ডিতের দল ঘাসের থেকে সবুজ সার বের করে নিয়ে সূর্যের বেগ্নি - পেরোনো আলোয় শুকিয়ে মুঠো মুঠো নাকে ঠুসছেন। সকালবেলায় ডান নাকে ; মধ্যাহ্নে বাঁ নাকে ; সায়াহ্নে দুই নাকে একসঙ্গে, সেইটেই বড়ো ভোজ। ওঁদের সমবেত হাঁচির শব্দে চমকে উঠে পশুপক্ষীরা সাঁতরিয়ে সমুদ্র পার হয়ে গেছে।
শোনাচ্ছে ভালো। অনেকদিন বেকার আছি দাদা, পাকযন্ত্রটা হন্যে হয়ে উঠেছে — তোমাদের ঐ নস্যটার দালালি করতে পারি যদি নিয়ুমার্কেটে, তা হলে —
অল্প একটু বাধা পড়েছে, সে কথা পরে বলব। তাঁদের আর - একটা মত আছে। তাঁরা বলেন, মানুষ দু পায়ে খাড়া হয়ে চলে বলে তাদের হৃদ্যন্ত্র পাকযন্ত্র ঝুলে ঝুলে মরছে ; অস্বাভাবিক অত্যাচার ঘটেছে লাখো লাখো বৎসর ধরে। তার জরিমানা দিতে হচ্ছে আয়ুক্ষয় করে। দোলায়মান হৃদয়টা নিয়ে মরছে নরনারী ; চতুষ্পদের কোনো বালাই নেই।
বুঝলুম, কিন্তু উপায়?
ওঁরা বলছেন, প্রকৃতির মূল মতলবটা শিশুদের কাছ থেকে শিখে নিতে হবে। সেই দ্বীপের সব চেয়ে উঁচু পাহাড়ে শিলালিপিতে অধ্যাপক খুদে রেখেছেন — সবাই মিলে হামাগুড়ি দাও, ফিরে এসো চতুষ্পদী চালে, যদি দীর্ঘকাল ধরণীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাও।
সাবাস! আরো কিছু বাকি আছে বোধ হয়?