শেষ বর্ষণ

    বরষনে মুখরিয়া,

বিজলি ঝলিয়া উঠে নবঘন মন্দ্রে।

রাজা। আঃ, এতক্ষণে একটু উৎসাহ লাগল। থামলে চলবে না। দেখো-না, তোমাদের মাদলওআলার হাত দুটো অস্থির হয়েছে, ওকে একটু কাজ দাও।

নটরাজ। বলি ও ওস্তাদ, ওই যে দলে দলে মেঘ এসে জুটল, ওরা যে খ্যাপার মতো চলেছে। ওদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলো-না, একেবারে মৃদঙ্গ বাজিয়ে বুক ফুলিয়ে যাত্রা জমে উঠুক-না সুরে কথায় মেঘে বিদ্যুতে ঝড়ে।

পথিক মেঘের দল জোটে ঐ শ্রাবণ-গগন-অঙ্গনে।

মন রে আমার, উধাও হয়ে নিরুদ্দেশের সঙ্গ নে।

       দিক-হারানো দুঃসাহসে

       সকল বাঁধন পড়ুক খসে,

কিসের বাধা ঘরের কোণের শাসন-সীমা লঙ্ঘনে।

  বেদনা তোর বিজুলশিখা জ্বলুক অন্তরে;

  সর্বনাশের করিস সাধন ব্রজ-মন্তরে।

       অজানাতে করবি গাহন,

       ঝড় সে পথের হবে বাহন,

শেষ করে দিস আপনারে তুই প্রলয়রাতের ক্রন্দনে।

রাজকবি। ঐ রে আবার ঘুরে ফিরে এলেন সেই ‘অজানা’ সেই তোমার ‘নিরুদ্দেশ’। মহারাজ, আর দেরি নেই, আবার কান্না নামল বলে।

নটরাজ। ঠিক ঠাউরেছ। বোধ হচ্ছে চোখের জলেরই জিত। বর্ষার রাতে সাথিহারার স্বপ্নে অজানা বন্ধু ছিলেন অন্ধকার ছায়ায় স্বপ্নের মতো; আজ বুঝি বা শ্রাবণের প্রাতে চোখের জলে ধরা দিলেন। মধুরিকা, ভৈরবীতে করুণ সুর লাগাও, তিনি তোমার হৃদয়ে কথা কবেন।

    বন্ধু, রহো রহো সাথে

আজি এ সঘন শ্রাবণপ্রাতে।

    ছিলে কি মোর স্বপনে

        সাথিহারা রাতে।

    বন্ধু, বেলা বৃথা যায় রে

আজ এ বাদলে আকুল হাওয়ায় রে।

    কথা কও মোর হৃদয়ে

        হাত রাখো হাতে।

রাজা। কান্না হাসি বিরহ মিলন সব রকমই তো খণ্ড খণ্ড করে হল, এইবার বর্ষার একটা পরিপূর্ণ মূর্তি দেখাও দেখি।

নটরাজ। ভালো কথা মনে করিয়ে দিলেন মহারাজ। নাট্যাচার্য, তবে ঐটে শুরু করো।

ঐ আসে ঐ অতি ভৈরব হরষে,