শেষ বর্ষণ
গগন ভরিয়া এসেছে ভুবন-ভরসা,
দুলিছে পবনে সন সন বনবীথিকা,
       গীতময় তরুলতিকা।
শতেক যুগের কবিদলে মিলি আকাশে
ধ্বনিয়া তুলিছে মত্তমদির বাতাসে
       শতেক যুগের গীতিকা,
শত শত গীত-মুখরিত বনবীথিকা।

রাজা। বাঃ, বেশ জমেছে। আমি বলি আজকের মতো বাদলের পালাই চলুক।

নটরাজ। কিন্তু মহারাজ দেখছেন না, মেঘে মেঘে পালাই-পালাই ভাব। শেষ কেয়াফুলের গন্ধে বিদায়ের সুর ভিজে হাওয়ায় ভরে উঠল। ঐ যে ‘এবার আমার গেল বেলা’ বলে কেতকী।

একলা বসে বাদলশেষে শুনি কত কী।

‘এবার আমার গেল বেলা’ বলে কেতকী।

    বৃষ্টি-সারা মেঘ যে তারে

    ডেকে গেল আকাশপারে,

     তাই তো সে যে উদাস হল

        নইলে যেত কি।

ছিল সে যে একটি ধারে বনের কিনারায়,

উঠত কেঁপে তড়িৎ-আলোর চকিত ইশারায়।

     শ্রাবণ-ঘন অন্ধকারে

    গন্ধ যেত অভিসারে,

     সন্ধ্যাতারা আড়াল থেকে

         খবর পেত কি।

রাজা। নটরাজ, বাদলকে বিদায় দেওয়া চলবে না। মনটা বেশ ভরে উঠেছে।

নটরাজ। তা হলে কবির সঙ্গে বিরোধ বাধবে। তাঁর পালায় বর্ষা এবার যাব যাব করছে।

রাজা। তুমি তো দেখি বিদ্রোহী দলের একজন, কবির কথাই মান, রাজার কথা মান না? আমি যদি বলি যেতে দেব না?

নটরাজ। তা হলে আমিও তাই বলব। কবিও তাই বলবে। ওগো রেবা, ওগো করুণিকা, বাদলের শ্যামল ছায়া কোন্‌ লজ্জায় পালাতে চায়?

নাট্যাচার্য। নটরাজ, ও বলছে ওর সময় গেল।

নটরাজ। গেলই বা সময়। কাজের সময় যখন যায় তখনই তো শুরু হয় অকাজের খেলা। শরতের আলো আসবে ওর সঙ্গে খেলতে। আকাশে হবে আলোয় কালোয় যুগল মিলন।

শ্যামল শোভন শ্রাবণ-ছায়া, নাই বা গেলে

       সজল বিলোল আঁচল মেলে।