নবীন
পাপড়িগুলি সব পড়বে ঝরে — তখন বাণী পাবে কোথায়। ত্বরা কর্ গো, ত্বরা কর্। বাতাস তপ্ত হয়ে এল, এই বেলা রিক্ত হবার আগে তোর শেষ অঞ্জলি পূর্ণ করে দে ; তার পরে আছে করুণ ধূলি, তার আঁচলে সব ঝরা ফুলের বিরাম।

যখন মল্লিকাবনে প্রথম ধরেছে কলি

সুন্দরের বীণার তারে কোমল গান্ধারে মীড় লেগেছে। আকাশের দীর্ঘনিশ্বাস বনে বনে হায় হায় করে উঠল, পাতা পড়ছে ঝরে ঝরে। বসন্তের ভূমিকায় ঐ পাতাগুলি একদিন শাখায় শাখায় আগমনীর গানে তাল দিয়েছিল, তারাই আজ যাবার পথের ধূলিকে ঢেকে দিল, পায়ে পায়ে প্রণাম করতে লাগল বিদায়পথের পথিককে। নবীনকে সন্ন্যাসীর বেশ পরিয়ে দিলে ; বললে, তোমার উদয় সুন্দর, তোমার অন্তও সুন্দর হোক।

ঝরা পাতা গো, আমি তোমারি দলে

মন থাকে সুপ্ত, তখনো দ্বার থাকে খোলা, সেইখান দিয়ে কার আনাগোনা হয় ; উত্তরীয়ের গন্ধ আসে ঘরের মধ্যে, ভুঁইচাঁপা ফুলের ছিন্ন পাপড়িগুলি লুটিয়ে থাকে তার যাওয়ার পথে ; তার বীণা থেকে বসন্তবাহারের রেশটুকু কুড়িয়ে নেয় মধুকরগুঞ্জরিত দক্ষিণের হাওয়া ; কিন্তু জানতে পাই নে, সে এসেছিল। জেগে উঠে দেখি তার আকাশপারের মালা সে পরিয়ে গিয়েছে, কিন্তু এ-যে বিরহের মালা।

কখন দিলে পরায়ে

বনবন্ধুর যাবার সময় হল, কিন্তু হে বনস্পতি শাল, অবসানের দিন থেকে তুমি অবসাদ ঘুচিয়ে দিলে। উৎসবের শেষ বেলাকে তোমার অক্লান্ত মঞ্জরী ঐশ্বর্যে দিল ভরিয়ে। নবীনের শেষ জয়ধ্বনি তোমার বীরকন্ঠে। সেই ধ্বনি আজ আকাশকে পূর্ণ করল, বিষাদের ম্লানতা দূর করে দিলে। অরণ্যভূমির শেষ আনন্দিত বাণী তুমিই শুনিয়ে দিলে যাবার পথের পথিককে, বললে ‘ পুনর্দর্শনায় '। তোমার আনন্দের সাহস কঠোর বিচ্ছেদের সমুখে দাঁড়িয়ে।

ক্লান্ত যখন আম্রকলির কাল

দূরের ডাক এসেছে। পথিক, তোমাকে ফেরাবে কে। তোমার আসা আর তোমার যাওয়াকে আজ এক করে দেখাও। যে পথ তোমাকে নিয়ে আসে সেই পথই তোমাকে নিয়ে যায়, আবার সেই পথই ফিরিয়ে আনে। হে চিরনবীন, এই বঙ্কিম পথেই চিরদিন তোমার রথযাত্রা ; যখন পিছন ফিরে চলে যাও সেই চলে যাওয়ার ভঙ্গিটি আবার এসে মেলে সামনের দিকে ফিরে আসায় — শেষ পর্যন্ত দেখতে পাইনে, হায় হায় করি।

এখন আমার সময় হল

বিদায়বেলার অঞ্জলি যা শূন্য করে দেয় তা পূর্ণ হয় কোন্‌খানে সেই কথাটা শোনা যাক।

এ বেলা ডাক পড়েছে কোন্‌খানে

আসন্ন বিরহের ভিতর দিয়ে শেষ বারের মতো দেওয়া-নেওয়া হয়ে যাক। তুমি দিয়ে যাও তোমার বাহিরের দান, তোমার উত্তরীয়ের সুগন্ধ, তোমার বাঁশির গান, আর নিয়ে যাও এই অন্তরের বেদনা আমার নীরবতার ডালি থেকে।

তুমি কিছু দিয়ে যাও

খেলা-শুরুও খেলা, খেলা-ভাঙাও খেলা। খেলার আরম্ভে হল বাঁধন, খেলার শেষে হল বাঁধন খোলা। মরণে বাঁচনে হাতে হাতে ধরে এই খেলার নাচন। এই খেলায় পুরোপুরি যোগ দাও — শুরুর সঙ্গে শেষের সঙ্গে সম্পূর্ণ মিলিয়ে নিয়ে জয়ধ্বনি করে চলে যাও।

আজ খেলা-ভাঙার খেলা খেলবি আয়