সূক্ষ্ম বিচার
ও অবস্থার ভিন্ন ভিন্ন যাবতীয় — এ তো মুশকিল হল! কিছুতেই গুছিয়ে উঠতে পারছি নে। এক কথায় নাম হচ্ছে মানুষের এবং প্রাণীর এবং — দূর হোক গে, মানুষের, প্রাণীর এবং ইত্যাদির পরিচয়ের উপায়।

চণ্ডীচরণ। এ সম্বন্ধে তর্ক আছে। পরিচয় কাকে বলে!

কেবলরাম। ( জোড়হস্তে) আমি কাউকেই বলি নে। মশায়ই বলুন।

চণ্ডীচরণ। ভিন্ন ভিন্ন পদার্থের প্রভেদ অবগত হয়ে তাদের স্বতন্ত্র করে জানা। এই ঠিক তো!

কেবলরাম। এ ছাড়া আর তো কিছু হতেই পারে না।

চণ্ডীচরণ। তা হলে তুমি অস্বীকার করছ না?

কেবলরাম। আজ্ঞে না।

চণ্ডীচরণ। যদিই অস্বীকার কর তা হলে এ সম্বন্ধে গুটিকতক তর্ক আছে।

কেবলরাম। না না, আমি কিছুমাত্র অস্বীকার করছি নে।

চণ্ডীচরণ। মনে কর, যদিই কর।

কেবলরাম। ( ভীতভাবে ) আজ্ঞে না, মনেও করতে পারি নে।

চণ্ডীচরণ। তুমি না কর, যদি আর কেউ করে।

কেবলরাম। কারো সাধ্য নেই যে করে। এত বড়ো দুঃসাহসিক কে আছে!

চণ্ডীচরণ। আচ্ছা বেশ, এটা যেন স্বীকারই করলে, তার পরে — নামই যদি পরিচয়ের একমাত্র উপায় হবে

তবে কি আমার চেহারা পরিচয়ের উপায় নয়? আর আমার অন্যান্য লক্ষণগুলো-

কেবলরাম। আজ সম্পূর্ণ বুঝেছি নাম কাকে বলে তার নামগন্ধও জানি নে, আপনিই বলে দিন।

চণ্ডীচরণ। ভাষার দ্বারা স্বতন্ত্র পদার্থের স্বাতন্ত্র্য নির্দিষ্ট করবার একটি কৃত্রিম উপায়কে বলে নামকরণ-যদি অস্বীকার কর-

কেবলরাম। না, আমি অস্বীকার করি নে-

চণ্ডীচরণ। কেবল তর্কের অনুরোধেও যদি অস্বীকার কর-

কেবলরাম। তর্কের অনুরোধে কেন, বাবার অনুরোধেও অস্বীকার করতে পারি নে।

চণ্ডীচরণ। এর কোনো একটা অংশও যদি অস্বীকার কর।

কেবলরাম। একটি অক্ষরও অস্বীকার করতে পারি নে।

চণ্ডীচরণ। এই মনে করো, ‘ কৃত্রিম ' কথাটা সম্বন্ধে নানা তর্ক উঠতে পারে।

কেবলরাম। ঠিক তার উলটো, ঐ কথাতেই সকল তর্ক দূর হয়ে যায়।

চণ্ডীচরণ। আচ্ছা, তাই যদি হল, মীমাংসা করা যাক আমার নাম কী।

কেবলরাম। ( হতাশভাবে) মীমাংসা আপনিই করুন, আমার খিদে পেয়েছে।

চণ্ডীচরণ। নাম আমার সহস্র আছে, কোন্‌টা তুমি শুনতে চাও?

কেবলরাম। যেটা আপনি সবচেয়ে পছন্দ করেন।

চণ্ডীচরণ। প্রথমে বিচার করতে হবে কিসের সঙ্গে আমার প্রভেদ জানতে চাও — যদি পশুর সঙ্গে আমার প্রভেদ নির্দেশ করতে চাও-

কেবলরাম। আজ্ঞে, তা চাই নে-