শেষরক্ষা

ক্ষান্তমণি। স্ত্রী পুত্র থেকেই বা কী হয়? ওর তো তবু নেই। বলে যে, রোজগার না ক'রে বিয়ে করবে না।

ইন্দু। জানিস, ক্ষান্তদিদি, ওদের তিন জনের ছবিতে যেন তিন কাল মূর্তিমান। চন্দ্রবাবু অতীত, বিনোদবাবু বর্তমান, আর ললিতবাবু ভাবী।

ক্ষান্তমণি। ভাবী? কার ভাবী লো?

ইন্দু। সে কথাটা রইল ভবিষ্যতের গর্ভে।

ক্ষান্তমণি। দেখ্‌ ভাই ইন্দু, তোকে সত্যি করে বলি। তোরা তো আমাকে বঙ্কিমবাবুর বইগুলো পড়ালি, ভেবেছিলুম একটুও বুঝতে পারব না — কিন্তু বেশ লাগছে।

ইন্দু। এই দেখ্‌, মুশকিলে ফেললি তো। তোর মনটা এখন আয়েষা হয়ে দাঁড়িয়েছে, কিন্তু ওজনমত জগৎসিংহ পাবি কোথা?

ক্ষান্তমণি। তা বলিস নে ইন্দু। আমি যেরকম মাপের আয়েষা সেরকম মাপের জগৎসিংহও ঘরে মজুদ আছে। কিন্তু —

ইন্দু। চাল-চলনটা দোরস্ত হয় নি। মনে মনে আয়েষা হয়েছ, ব্যবহারে আয়েষাগিরি করে উঠতে পারছ না।

ক্ষান্তমণি। কতকটা তাই বটে।

ইন্দু। প্র্যাক্‌টিক্যাল্‌ এডুকেশনটা হয় নি আর-কি। কিছুদিন প্র্যাক্‌টিস্‌ চাই।

ক্ষান্তমণি। তোর ইংরিজি আমি বুঝতে পারি নে, ভাই।

ইন্দু। আমার বক্তব্য হচ্ছে, বঙ্কিমের কাছে মন্ত্র পেয়েছ, আমার কাছ থেকে তার সাধনা পেতে হবে।

ক্ষান্তমণি। তোমার কাছ থেকে?

ইন্দু। আমার কাছ থেকে হলেই নিরাপদ হবে। মনুসংহিতার সঙ্গে বঙ্কিমবাবুর মিল রক্ষা করেই আমি তোমাকে শিক্ষা দেব। আজ এখনি হোক হাতে-খড়ি। আচ্ছা, এক কাজ করা যাক। মনে করো, আমি চন্দ্রবাবু, আপিস থেকে ফিরে এসেছি, খিদেয় প্রাণ বেরিয়ে যাচ্ছে — তার পর তুমি কী করবে বলো দেখি। রোসো ভাই, চন্দ্রবাবুর ঐ চাপকান আর শামলাটা পরে নিই, নইলে আমাকে চন্দ্রবাবু মনে হবে না।


আপিসের বেশ পরিধান ও ক্ষান্তর উচ্চহাস্য

ক্ষান্তমণি, স্বামীর প্রতি পরিহাস অত্যন্ত গর্হিত কার্য। পতিব্রতা রমণী কদাপি উচ্চহাস্য করেন না। কোনো কারণে হাস্য অনিবার্য হইলে সাধ্বী স্ত্রী প্রথমে স্বামীর অনুমতি লইয়া পরে বদনে অঞ্চল দিয়া নয়ন নত করিয়া ঈষৎ স্মিতহাস্য হাসিতে পারেন। এই গেল মনুসংহিতা, এবার এসো নবীন কবির গীতিকাব্যে। আমি আপিস থেকে ফিরে এসেছি, এখন তোমার কী কর্তব্য বলো।

ক্ষান্তমণি। প্রথমে তোমার চাপকানটি এবং শামলাটি খুলে দিই, তার পরে জলখাবার —

ইন্দু। নাঃ, তোমার কিছু শিক্ষা হয় নি। আচ্ছা, তুমি তবে চন্দ্রবাবু সাজো, আমি তোমার স্ত্রী সাজছি —

ক্ষান্তমণি। না ভাই, সে আমি পারব না —

ইন্দু। আচ্ছা, তবে আর-একবার চেষ্টা করো। বড়োবউ, চাপকানটা খুলে আমার ধুতি-চাদরটা এনে দাও তো।

ক্ষান্তমণি। ( উঠিয়া) এই দিচ্ছি।

ইন্দু। ও কী করছ! তুমি ঐখানে হাতের উপর মাথা রেখে বসে থাকো — বলো, ‘ নাথ, আজ সন্ধেবেলায় কী সুন্দর বাতাস দিচ্ছে! আজ আর কিছুতে মন লাগছে না,