শেষরক্ষা

ইন্দু ও ক্ষান্তমণির প্রবেশ

ক্ষান্তমণি। শুনলি তো ভাই, আমার কর্তাটির মধুর কথাগুলি?

ইন্দু। কেন ভাই, আমার তো মন্দ লাগে নি।

ক্ষান্তমণি। তোর মন্দ লাগবে কেন? তোর তো আর বাজে নি। যার বেজেছে সেই জানে —

ইন্দু। তুমি যে একেবারে ঠাট্টা সইতে পার না। তোমার স্বামী কিন্তু ভাই তোমাকে সত্যি ভালোবাসে। দিনকতক বাপের বাড়ি গিয়ে বরং পরীক্ষা করে দেখো-না —

ক্ষান্তমণি। তাই একবার ইচ্ছা করে, কিন্তু জানি থাকতে পারব না। তা যা হোক, এখন তোদের ওখানে যাই। ওরা তো বউবাজারের রাস্তা ঘুরে যাবে, সে এখনো ঢের দেরি আছে।

ইন্দু। তুমি এগোও ভাই, তোমার স্বামীর এই বইগুলি গুছিয়ে দিয়ে যাই।

[ ক্ষান্তর প্রস্থান

ললিতবাবু তাঁর এই খাতাটা ফেলে গেছেন। এটা না দেখে আমি যাচ্ছি নে। ( খাতা খুলিয়া) ওমা! এ যে কবিতা। কাদম্বিনীর প্রতি। আ মরণ। সে পোড়ারমুখি আবার কে।

জল দিবে অথবা বজ্র, ওগো কাদম্বিনী,

হতভাগ্য চাতক তাই ভাবিছে দিনরজনী।

ভারি যে অবস্থা খারাপ! জলও না, বজ্রও না, হতভাগ্য চাতকের জন্যে কবিরাজের তেলের দরকার।

আর কিছু দাও বা না-দাও, অয়ি অবলে সরলে,

বাঁচি সেই হাসিভরা মুখ আর-একবার দেখিলে।

আহাহাহা! অবলে সরলে! পুরুষগুলো ভারি বোকা! মনে করলে, ওঁর প্রতি ভারি অনুগ্রহ করে সে হেসে গেল। হাসতে নাকি সিকি পয়সা খরচ হয়। কই আমাদের কাছে তো কোনো কাদম্বিনী সাত পুরুষে এমন করে হাসতে আসে না! অবলে সরলে! সত্যি বাপু, মেয়ে জাতটাই ভালো নয়। এত ছলও জানে। ছি ছি! এ কবিতাও তেমনি। আমি যদি কাদম্বিনী হতুম তো এমন পুরুষের মুখ দেখতাম না। যে লোক চোদ্দটা অক্ষর সামলে চলতে পারে না তার সঙ্গে আবার প্রণয়! এ খাতা আমি ছিঁড়ে ফেলব ; পৃথিবীর একটা উপকার করব ; কাদম্বিনীর দেমাক বাড়তে দেব না।

    পুরুষের বেশে হরিলে পুরুষের মন,

এবার     নারীবেশে কেড়ে নিয়ে যাও জীবন মরণ।

এর মানে কী!

কদম্ব যেমনি আমা প্রথম দেখিলে,

  কেমন করে ভৃত্য বলে তখনি চিনিলে!

ওমা! ওমা! ওমা! এ যে আমারই কথা। এইবার বুঝেছি পোড়ারমুখি কাদম্বিনী কে! (হাস্য) তাই বলি, এমন করে কাকে লিখলেন! ওমা, কত কথাই বলেছেন। আর-একবার ভালো করে সমস্তটা পড়ি। কিন্তু কী চমৎকার হাতের অক্ষর! একেবারে যেন মুক্তো বসিয়ে গেছে।