রাজা ও রানী

যে প্রেম করিছে ভিক্ষা সমস্ত বসুধা

একা আমি সে প্রেমের যোগ্য নই কভু।

বিক্রমদেব।  অপদার্থ আমি! দীন কাপুরুষ আমি!

কর্তব্যবিমুখ আমি, অন্তঃপুরচারী!

কিন্তু মহারানী, সে কি স্বভাব আমার?

আমি ক্ষুদ্র, তুমি মহীয়সী? তুমি উচ্চে,

আমি ধূলিমাঝে? নহে তাহা। জানি আমি

আপন ক্ষমতা। রয়েছে দুর্জয় শক্তি

এ হৃদয়-মাঝে, প্রেমের আকারে তাহা

দিয়েছি তোমারে। বজ্রাগ্নিরে করিয়াছি

বিদ্যুতের মালা, পরায়েছি কন্ঠে তব।

    সুমিত্রা।  ঘৃণা করো মহারাজ, ঘৃণা করো মোরে

সেও ভালো — একেবারে ভুলে যাও যদি

সেও সহ্য হয় — ক্ষুদ্র এ নারীর 'পরে

করিয়ো না বিসর্জন সমস্ত পৌরুষ।

বিক্রমদেব।  এত প্রেম, হায়, তার এত অনাদর!

চাহ না এ প্রেম? না চাহিয়া দস্যুসম

নিতেছ কাড়িয়া। উপেক্ষার ছুরি দিয়া

কাটিয়া তুলিছ — রক্তসিক্ত তপ্ত প্রেম

মর্ম বিদ্ধ করি। ধূলিতে দিতেছ ফেলি

নির্মম নিষ্ঠুর! পাষাণ-প্রতিমা তুমি,

যত বক্ষে চেপে ধরি অনুরাগভরে,

তত বাজে বুকে।

    সুমিত্রা।                      চরণে পতিত দাসী,

কী করিতে চাও করো। কেন তিরস্কার?

নাথ, কেন আজি এত কঠিন বচন!

কত অপরাধ তুমি করেছ মার্জনা,

কেন রোষ বিনা অপরাধে!

বিক্রমদেব।                           প্রিয়তমে,

উঠ উঠ, এসো, বুকে — স্নিগ্ধ আলিঙ্গনে

এ দীপ্ত হৃদয়জ্বালা করহ নির্বাণ।

কত সুধা, কত ক্ষমা ওই অশ্রুজলে