বিসর্জন

বেলা করে আসি, খায় না সে তৃণদল,

ডেকে ডেকে চায় পথপানে — কোলে করে

নিয়ে তারে, ভিক্ষা-অন্ন কয় জনে ভাগ

করে খাই। আমি তার মাতা।

জয়সিংহ।                            মহারাজ,

আপনার প্রাণ-অংশ দিয়ে, যদি তারে

বাঁচাইতে পারিতাম, দিতাম বাঁচায়ে।

মা তাহারে নিয়েছেন — আমি তারে আর

ফিরাব কেমনে?

অপর্ণা।                     মা তাহারে নিয়েছেন?

মিছে কথা! রাক্ষসী নিয়েছে তারে!

জয়সিংহ।                        ছি ছি,

ও কথা এনো না মুখে।

অপর্ণা।                         মা, তুমি নিয়েছ

কেড়ে দরিদ্রের ধন! রাজা যদি চুরি

করে, শুনিয়াছি নাকি, আছে জগতের

রাজা — তুমি যদি চুরি করো, কে তোমার

করিবে বিচার! মহারাজ, বলো তুমি —

গোবিন্দমাণিক্য।   বৎসে, আমি বাক্যহীন — এত ব্যথা কেন,

এত রক্ত কেন, কে বলিয়া দিবে মোরে?

অপর্ণা।     এই-যে সোপান বেয়ে রক্তচিহ্ন দেখি

এ কি তারি রক্ত? ওরে বাছনি আমার!

মরি মরি, মোরে ডেকে কেঁদেছিল কত,

চেয়েছিল চারি দিকে ব্যাকুল নয়নে,

কম্পিত কাতর বক্ষে, মোর প্রাণ কেন

যেথা ছিল সেথা হতে ছুটিয়া এল না?

প্রতিমার প্রতি

 

জয়সিংহ।    আজন্ম পূজিনু তোরে, তবু তোর মায়া

বুঝিতে পারি নে। করুণায় কাঁদে প্রাণ

মানবের, দয়া নাই বিশ্বজননীর!