বিসর্জন

  জয়সিংহ।                     উপায়! কিসের

উপায় প্রভু! হা ধিক্‌! জননী, তোমার

হস্তে খড়্গ নাই? রোষে তব বজ্রানল

নাহি চণ্ডী? তব ইচ্ছা উপায় খুঁজিছে,

খুঁড়িছে সুরঙ্গপথ চোরের মতন

রসাতলগামী? একি পাপ!

রঘুপতি।                         পাপপুণ্য

তুমি কিবা জানো!

জয়সিংহ।     শিখেছি তোমারি কাছে।

রঘুপতি।     তবে এসো বৎস, আর-এক শিক্ষা দিই।

পাপপুণ্য কিছু নাই। কে বা ভ্রাতা, কে বা

আত্মপর! কে বলিল হত্যাকাণ্ড পাপ!

এ জগৎ মহা হত্যাশালা। জানো না কি

প্রত্যেক পলকপাতে লক্ষকোটি প্রাণী

চির আঁখি মুদিতেছে! সে কাহার খেলা?

হত্যায় খচিত এই ধরণীর ধূলি।

প্রতিপদে চরণে দলিত শত কীট —

তাহারা কী জীব নহে? রক্তের অক্ষরে

অবিশ্রাম লিখিতেছে বৃদ্ধ মহাকাল

বিশ্বপত্রে জীবের ক্ষণিক ইতিহাস।

হত্যা অরণ্যের মাঝে, হত্যা লোকালয়ে,

হত্যা বিহঙ্গের নীড়ে, কীটের গহ্বরে,

অগাধ সাগর-জলে, নির্মল আকাশে,

হত্যা অকারণে, হত্যা অনিচ্ছার বশে —

চলেছে নিখিল বিশ্ব হত্যার তাড়নে

ঊর্ধ্বশ্বাসে প্রাণপণে, ব্যাঘ্রের আক্রমে

মৃগসম, মুহূর্ত দাঁড়াতে নাহি পারে।

মহাকালী কালস্বরূপিণী, রয়েছেন

দাঁড়াইয়া তৃষাতীক্ষ্ম লোলজিহ্বা মেলি —

বিশ্বের চৌদিক বেয়ে চির রক্তধারা

ফেটে পড়িতেছে, নিষ্পেষিত দ্রাক্ষা হতে

রসের মতন, অনন্ত খর্পরে তাঁর —