বিসর্জন

রঘুপতির প্রবেশ

 

রঘুপতি।                             জয়সিংহ!

জয়সিংহ।     তোমারে চিনি নে আমি। আমি চলিয়াছি

আমার অদৃষ্টভরে ভেসে নিজ পথে,

পথের সহস্র লোক যেমন চলেছে।

তুমি কে বলিছ মোরে দাঁড়াইতে? তুমি

চলে যাও — আমি চলে যাই।

রঘুপতি।                               জয়সিংহ!

জয়সিংহ।    ওই তো সম্মুখে পথ চলেছে সরল —

চলে যাব ভিক্ষাপাত্র হাতে, সঙ্গে লয়ে

ভিখারিনী সখী মোর। কে বলিল, এই

সংসারের রাজপথ দুরূহ জটিল!

যেমন ক'রেই যাই, দিবা-অবসানে

পঁহুছিব জীবনের অন্তিম পলকে,

আচার বিচার তর্ক বিতর্কের জাল

কোথা মিশে যাবে। ক্ষুদ্র এই পরিশ্রান্ত

নরজন্ম সমর্পিব ধরণীর কোলে —

দু-চারি দিনের এই সমষ্টি আমার,

দু-চারিটা ভুলভ্রান্তি ভয় দুঃখসুখ,

ক্ষীণ হৃদয়ের আশা, দুর্বলতাবশে

ভ্রষ্ট ভগ্ন এ জীবনভার, ফিরে দিয়ে

অনন্তকালের হাতে, গভীর বিশ্রাম।

এই তো সংসার! কী কাজ শাস্ত্রের বিধি,

কী কাজ গুরুতে!

                প্রভু! পিতা! গুরুদেব!

কী বলিতেছিনু! স্বপ্নে ছিনু এতক্ষণ।

এই সে মন্দির — ওই সেই মহাবট

দাঁড়ায়ে রয়েছে, অটল কঠিন দৃঢ়

নিষ্ঠুর সত্যের মতো। কী আদেশ দেব!

ভুলি নাই কী করিতে হবে। এই দেখো —