অচলায়তন

আমার      কোথায় হল লীন,

কেবল      ভাষাহারা অশ্রুধারায়

           পরান কেঁদে উঠে।

আচ্ছা দাদাঠাকুর, তোমাকে আর কাঁদতে হয় না? তুমি যাঁর কথা বল তিনি তোমার চোখের জল মুছিয়েছেন?

দাদাঠাকুর। তিনি চোখের জল মোছান, কিন্তু চোখের জল ঘোচান না।

পঞ্চক। কিন্তু দাদা, আমি তোমার ঐ শোণপাংশুদের দেখি আর মনে ভাবি, ওরা চোখের জল ফেলতে শেখে নি। ওদের কি তুমি একেবারেই কাঁদাতে চাও না।

দাদাঠাকুর। যেখানে আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ে না সেখানে খাল কেটে জল আনতে হয়। ওদেরও রসের দরকার হবে, তখন দূর থেকে বয়ে আনবে। কিন্তু দেখেছি ওরা বর্ষণ চায় না, তাতে ওদের কাজ কামাই যায়, সে ওরা কিছুতেই সহ্য করতে পারে না, ঐ রকমই ওদের স্বভাব।

পঞ্চক। ঠাকুর, আমি তো সেই বর্ষণের জন্যে তাকিয়ে আছি। যতদূর শুকোবার তা শুকিয়েছে, কোথাও একটু সবুজ আর কিছু বাকি নেই, এইবার তো সময় হয়েছে—মনে হচ্ছে যেন দূর থেকে গুরু গুরু ডাক শুনতে পাচ্ছি। বুঝি এবার ঘন নীল মেঘে তপ্ত আকাশ জুড়িয়ে যাবে, ভরে যাবে।

গান
দাদাঠাকুর।                                             বুঝি এল, বুঝি এল, ওরে প্রাণ।

এবার ধর্ দেখি তোর গান।

ঘাসে ঘাসে খবর ছোটে

ধরা বুঝি শিউরে ওঠে,

দিগন্তে ওই স্তব্ধ আকাশ পেতে আছে কান।

পঞ্চক। ঠাকুর, আমার বুকের মধ্যে কী আনন্দ যে লাগছে সে আমি বলে উঠতে পারি নে। এই মাটিকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করে। ডাকো ডাকো, তোমার একটা ডাক দিয়ে এই আকাশ ছেয়ে ফেলো।

গান

আজ     যেমন করে গাইছে আকাশ

            তেমন করে গাও গো।

        যেমন করে চাইছে আকাশ

            তেমনি করে চাও গো।

আজ      হাওয়া যেমন পাতায় পাতায়

            মর্মরিয়া বনকে কাঁদায়,

         তেমনি আমার বুকের মাঝে

             কাঁদিয়া কাঁদাও গো।

শুনছ দাদা, ঐ কাঁসর বাজছে।