উত্তর-প্রত্যুত্তর
কথা! লেখক নিশ্চয়ই কলিকাতাবাসী হইবেন, কাকের মুখে সংবাদ দেওয়ার কথা যে বঙ্গদেশের প্রায় সমুদয় স্থানেই (কলিকাতায় আছে কিনা জানি না) প্রচলিত আছে, তাহা তিনি অবগত নহেন। কাকই যে প্রেমের দূত এরূপ নহে; কোকিলও সময়ে সময়ে প্রেমের দৌত্য কার্য করিয়া থাকে। আমরা একটি গীতে শুনিয়াছি—‘যা রে কোকিল আমার বঁধু আছে যে দেশে’ ইত্যাদি। হিন্দুস্থানী ভাষায় ষষ্ঠীতে ‘ক’ বিভক্তি হইতে কোথাও দেখি নাই; ‘কা’, ‘কি’, ‘কে’, ‘কিস্‌কা’ ‘কিস্‌কী’ ‘কিস্‌কে’ পড়িয়াছি। হিন্দী ব্যাকরণ ভাষা-চন্দ্রোদয়ে এই তিনটি বৈ ষষ্ঠীর বিভক্তি নাই। তবে ‘তাক’ হইতে তাহার ‘কাক’ হইতে কাহার টানিয়া বুনিয়া অর্থ করা যায়, কিন্তু তাহার সহিত ব্যাকরণের কোনো সংস্রব নাই।

শ্রীযোঃ

প্রত্যুত্তর—অমঙ্গল-সূচক কাক যে সংবাদ বহন করিতে পারে না এমন আমাদের কথা নহে। কিন্তু কোনো কবি এ পর্যন্ত কাককে প্রেমের ডাক-হরকরার কাজ দেন নাই। এ-সকল কাজ হংস, কোকিল, মেঘ, মাঝে মাঝে করিয়াছে। কাকের না চেহারা ভালো, না গলা ভালো, না স্বভাব ভালো; এই নিমিত্ত কবিরা কাককে প্রেমের কোমল কাজে নিযুক্ত করেন না। ব্যাকরণ-কারেরা যে ভাষার সৃষ্টি করে না, তাহা সকলেই জানেন। বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস প্রভৃতি কবিদের পদাবলীতে যদি শত শত স্থানে ষষ্ঠীতে ‘ক’ বিভক্তি ব্যবহার হইয়া থাকে, তবে আমার ব্যাকরণ খুলিবার কোনো আবশ্যক দেখিতেছি না। ‘কি কহব, রে, সখি, কানুক রূপ।’ ‘সুজনক প্রেম হেম সমতুল।’ ‘প্রেমক রীত অব বুঝহ বিচারি।’ ‘যাক দরশ বিনা ঝরয়ে পরাণ, অব নাহি হেরসি তাক বয়ান।’ এমন সহস্র উদাহরণ দেওয়া যায়।

শ্রীরঃ

উত্তর-

‘দক্ষি পবন বহে কৈছে যুবতী সহে

তাহে দুখ দেই অনঙ্গ।

গেলহুঁ পরাণ আশা দেই রাখই

দশ নখে লিখই ভুজঙ্গ।

প্রবন্ধ-লেখক কৃত এই পদের অর্থ আমাদের বিশেষরূপে হৃদয়ঙ্গম হইল না। অনঙ্গ মহাদেবকেই ভয় করিতে পারে, বড়ো জোর না হয় নন্দীকে ভয় করিবে, কিন্তু সর্পকেও ভয় করিতে হইবে কেন বুঝা গেল না। সম্ভবত ইহার অন্য কোনো অর্থ আছে।

শ্রীযোঃ

প্রত্যুত্তর—আমি যে টীকা করিয়াছিলাম, তাহা উদ্‌ধৃত করি। ‘শিবের ভূষণ ভুজঙ্গকে মদন ভয় করেন, এইজন্য বিরহিনী নখে ভুজঙ্গ আঁকিয়া তাহাকে ভয় দেখাইয় প্রাণকে আশা দিয়া রাখিতেছেন।’ এই পদটির আরম্ভেই আছে,

‘হিমকর পেখি আনত করু আনন

...

নয়ন কাজর দেই লিখই বিধুন্তুদ’—

ইত্যাদি।

চন্দ্রকে ভয় দেখাইবার জন্য রাধা রাহু আঁকিয়াছেন,তবে মদনকে ভয় দেখাইবার অভিপ্রায়ে সাপ আঁকা তাঁহার পক্ষে অসম্ভব নহে। এত দ্রব্য থাকিতে রাধা সাপ আঁকিতে গেলেন কেন? তাহার প্রধান কারণ, তিনি কখনো Art-School-এ পড়েন নাই, এই নিমিত্ত তাঁহার পক্ষে নন্দীর ছবি আঁকা অত্যন্ত কঠিন ব্যাপার, কিন্তু মাটির উপরে অঙ্গুলি বুলাইয়া গেলেই অতি সহজে সাপ আঁকা