ছন্দের অর্থ

এও পয়ার কিন্তু যেহেতু এর পদক্ষেপ আটে নয়, দুইয়ে, সেইজন্যে এর উপরে বোঝা সয় না। যে দ্রুত চলে তাকে হালকা হতে হয়। যদি লেখা যায়–

ধরিত্রীর চক্ষুনীর মুঞ্চনের ছলে কংসারির শঙ্খরব সংসারের তলে।

তাহলে ও একটা স্বতন্ত্র ছন্দ হয়ে যায়। সংস্কৃতেও দেখো, সমমাত্রার ছন্দ যেখানে দুয়ের লয়ে চলে সেখানে দৌড় বেশি। যেমন–

২    ২ ২    ২
হরি রিহ বিহরতি সর সব সন্তে।

অসম অর্থাৎ তিন মাত্রার চলনও দ্রুত।

পাষাণ মিলায় গায়ের বাতাসে।

এর লয়টা দুরন্ত। পড়লেই বোঝা যায়, এর প্রত্যেক তিন মাত্রা পরবর্তী তিন মাত্রাকে চাচ্ছে, কিছুতে তর সচ্ছে না। তিনের মাত্রাটা টল্‌টলে, গড়িয়ে যাবার দিকে তার ঝোঁক। এইজন্যে তিনকে গুণ করে ছয় বা বারো করলেও তার চাপল্য ঘোচে না। দুই মাত্রার চলন ক্ষিপ্র, তিন মাত্রার চঞ্চল, চার মাত্রার মন্থর, আট মাত্রার গম্ভীর। তিন মাত্রার ছন্দে যে পয়ারের মতো ফাঁক নেই তা যুক্তাক্ষর জুড়তে গেলেই ধরা পড়বে। যথা

গিরির গুহায় ঝরিছে নিঝর

এই পদটিকে যদি লেখা যায়

পর্বত- কন্দরে ঝরিছে নিঝর

তাহলে ছন্দের পক্ষে সাংঘাতিক হয়। অথচ পয়ারে

গিরিগুহাতল- বেয়ে ঝরিছে নিঝর

এবং

পর্বতকন্দরতলে ঝরিছে নিঝর

ছন্দের পক্ষে দুই-ই সমান।

বিষমমাত্রার ছন্দের স্বভাব হচ্ছে, তার প্রত্যেক পদে এক অংশে গতি, আর-এক অংশে বাধা। এই গতি এবং বাধার সম্মিলনে তার নৃত্য।

অহহ কল- য়ামি বল- য়াদিমণি- ভূষণং
হরিবিরহ- দহনবহ- নেন বহু- দূষণং।
তিন মাত্রার ‘অহহ’ যে ছাঁদে চলবার জন্যে বেগ সঞ্চয় করলে, দুই মাত্রার ‘কল’ তাকে হঠাৎ টেনে থামিয়ে দিলে, আবার পরক্ষণেই তিন যেই নিজমূর্তি ধরলে অমনি আবার দুই এসে তার লাগামে টান দিলে। এই বাধা যদি সত্যকার বাধা হত তাহলে ছন্দই হত না; এ কেবল বাধার ছল, এতে গতিকে আরো উস্‌কিয়ে দেয় এবং বিচিত্র করে তোলে। এইজন্যে অন্য ছন্দের চেয়ে বিষমমাত্রার ছন্দে গতিকে আরো যেন বেশি অনুভব করা যায়।

যাই হোক আমার বক্তব্য এই, ছন্দের পরিচয়ের মূলে দুটি প্রশ্ন আছে। এক হচ্ছে, তার প্রত্যেক পদক্ষেপে কটি করে মাত্রা