ছন্দের হসন্ত হলন্ত
মতো; মধুপুরের স্বাস্থ্যকর হাওয়ায় দেহ এক-আধ ইঞ্চি বাড়লেও চলে, আবার শহরে এসে এক-আধ ইঞ্চি কমলেও সহজে খাপ খেয়ে যায়। কান যদি সম্মতি না দিত তাহলে কোনো কবির সাধ্য ছিল না ছন্দ নিয়ে যা খুশি তাই করতে পারে।
বৎসরে বৎসরে হাঁকে কালের গোমায়ু–
যায় আয়ু, যায় আয়ু, যায় যায় আয়ু।

এখানে ‘বৎসর’ তিনমাত্রা। কিন্তু সেতারের মীড় লাগাবার মতো অল্প একটু টানলে বেসুর লাগে না। যথা–

সখা-সনে উৎসবে বৎসর যায়
শেষে মরি বিরহের ক্ষুৎপিপাসায়।
ফাগুনের দিনশেষে মউমাছি ও যে
মধুহীন বনে বৃথা মাধবীরে খোঁজে।

টান কমিয়ে দেওয়া যাক–

উৎসবের রাত্রিশেষে মৃৎপ্রদীপ হায়,
তারকার মৈত্রী ছেড়ে মৃত্তিকারে চায়।

দেখা যাচ্ছে, এটুকু কমিবেশিতে মামলা চলে না,বাংলাভাষার স্বভাবের মধ্যেই যথেষ্ট প্রশ্রয় আছে। যদি লেখা যেত

সখাসনে মহোৎসব বৎসর যায়

তাহলে নিয়ম বাঁচত, কারণ পূর্ববর্তী ওকারের সঙ্গে খণ্ড ৎ মিলে একমাত্রা; কিন্তু কর্ণধার বলছে ঐখানটায় তরণী যেন একটু কাত হয়ে পড়ল। আমি এক জায়গায় লিখেছি ‘উদয়-দিক্‌প্রান্ত-তলে’। ওটাকে বদলে ‘উদয়ের দিক্‌প্রান্ত-তলে’ লিখলে কানে খারাপ শোনাত না একথা প্রবন্ধলেখক বলেছেন, সালিসির জন্যে কবিদের উপর বরাত দিলুম।

অপরপক্ষে দেখা যাক, চোখ ভুলিয়ে ছন্দের দাবিতে ফাঁকি চালানো যায় কিনা।

এখনই আসিলাম দ্বারে,

অমনই ফিরে চলিলাম।

চোখও দেখে নি কভু তারে,

কানই শুনিল তার নাম।


দিলীপকুমার আশ্বিনের ‘উত্তরা’য় ছন্দ সম্বন্ধে আমার দুই-একটি চিঠির খণ্ড ছাপিয়েছেন। সর্বশেষে যে নোটটুকু দিয়েছেন তার থেকে বোঝা গেল, আমি যে কথা বলতে চেয়েছি এখনো সেটা তাঁর কাছে স্পষ্ট হয় নি।

তিনি আমারই লেখার নজির তুলে দেখিয়েছেন যে, নিম্নলিখিত কবিতায় আমি ‘একেকটি’ শব্দটাকে চার মাত্রার ওজন দিয়েছি।

ইচ্ছা করে অবিরত            আপনার মনোমত
            গল্প লিখি একেকটি করে।

এদিকে নীরেনবাবুর রচনায় “একটি কথা এতবার হয় কলুষিত” পদটিতে ‘একটি’ শব্দটাকে দুই মাত্রায় গণ্য করতে আপত্তি