যথার্থ দোসর
আছে, আর কোনো শ্রেণীর বর্ণাণু হইলে মিলিতে পারিত না। তেমনি আমার বর্ণাণু আর কোন্‌ হৃদয়ের বর্ণাণুর সহিত মিলিতে পারিবে, তাহা কোনো পার্থিব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে পড়িবার জো নাই, কিন্তু মিল আছেই। এমন বস্তু নাই যাহার মিল নাই। এ জগতে মিলের রাজ্য, প্রতি বর্ণের মিল আছে, প্রতি সুরের মিল আছে, প্রতি হৃদয়েরও মিল আছে। এ জগৎ মিত্রাক্ষরের কবিতা। এত মিল, এত অনুপ্রাস কোনো কবিতাতেই নাই।

যখন ভাবিয়া দেখা যায় যে, মনুষ্যের হৃদয়ে দোসর পাইবার ইচ্ছা কী বলবতী, তাহার জন্য সে কী না করিতে পারে, সে ইচ্ছার নিকটে জীবন পর্যন্ত কী অকিঞ্চিৎকর, মনের মতো দোসর পাইলে সে কী আনন্দই পায়,না পাইলে সে কী হাহাকারই করে, তখন মনে হয় যে, প্রতি লোকের দোসর আছেই, এককালে-না-এককালে পরস্পরের সহিত মিলন হইবেই। সংসারে যখন মাঝে মাঝে দোসরের মরীচিকা দেখিতে পাওয়া যায়, তখন নিশ্চয় বোধ হয়, জলাশয় কোনো-দিকে না-কোনো-দিকে আছেই, নহিলে আকাশপটে তাহার প্রতিবিম্ব পড়িতই না। মনের মানুষ পাইবার জন্য যেরূপ দুর্দান্ত ইচ্ছা অথচ সংসারে মনের মানুষ লইয়া এত অশ্রুপাত, হৃদয়ের এত রক্তপাত করিতে হয় যে, মনে হয় একদিন বোধ করি আসিবে যেদিন মনের মানুষ মিলিবে, অথচ এত কাঁদিতে হইবে না। হৃদয়ের প্রতিমার নিকট হৃদয়কে বলিদান দিতে হইবে না। ভালোবাসা ও সুখ, ভালোবাসা ও শান্তি এক পরিবারভুক্ত হইয়া বাস করিবে। এ সংসারে লোকে ভালোবাসে, অথচ ভালোবাসার সমগ্র প্রতিদান পায় না, ইহা বিকৃত অবস্থা। এ অসম্পূর্ণ অবস্থা, একদিন-না-একদিন দূর হইবে। যখন বন্ধুত্বের প্রতারণায় প্রেমের যন্ত্রণায় মন অশ্রুবর্ষণ করিতে থাকে, মন একেবারে ম্রিয়মাণ হইয়া ধুলায় লুটাইয়া পড়ে, তখন ইহা অপেক্ষা সান্ত্বনা কী হইতে পারে? একবার যদি চক্ষু মুদ্রিত করিয়া ভাবে, এ-সমস্ত মরীচিকা; তাহার যথার্থ ভালোবাসিবার লোক যে আছে সে কখনো তাহাকে কাঁদাইবে না, তাহাকে তিলমাত্র কষ্ট দিবে না, তাহার সহিত একদিন অনন্ত সুখের মিলন হইবে, তখন কী আরাম সে না পায়। আর-একজন ‘আমার’ আছে, সৃষ্ট জীবের মধ্যে তেমন ‘আমার’ আর কেহ নাই। এমন সময় যখন আসে, যখন ভালোবাসিবার জন্য হৃদয় লালায়িত হয়, এমন ঋতু যখন আসে যখন

'How many a one, though none be near to love,
Loves then the shade of his own soul half seen
In any mirror—'

তখন হৃদয়ে সেই দোসরের একটি অশরীরী প্রতিমা প্রতিষ্ঠা করিয়া তাহাকেই ভালোবাসো, তাহার সহিত কথোপকথন করো। তাহাকে বলো, ‘হে আমার প্রাণের দোসর, আমার হৃদয়ের হৃদয়, আমি সিংহাসন প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছি, কবে তুমি আসিবে? এ সিংহাসনে যদি আর কাহাকেও বসাইয়া থাকি তবে তাহা ভ্রমক্রমে হইয়াছে; কিছুতেই সন্তোষ হয় নাই, কিছুতেই তৃপ্তি হয় নাই, তাই তোমার জন্য অপেক্ষা করিয়া বসিয়া আছি।’

তাহাকে বলো—

In all my singing and speaking,
   I send my soul forth seeking;
O soul of my soul's dreaming;
   When wilt thou hear and speak?
Lovely and lonely seeming,
   Thou art there in my dreaming.
Hast thou no sorrow for speaking