চতুর্থ। সেটা বাঁ-হাতি নয় সেটা ডান-হাতি।
দ্বিতীয়। দূর খেপা, সেটা বাঁ-হাতি।
চতুর্থ। তোর কথাতেই সেটা বাঁ-হাতি?
দ্বিতীয়। বাঁ-হাতি যদি না হইবে তবে সে পুকুরটা–
উদয়াদিত্য। হাঁ বাপু, সেটা বাঁ-হাতি বলিয়া বোধ হইতেছে, তার পরে বলিয়া যাও।
দ্বিতীয়। হাঁ। সেই বাঁ-হাতি আমবাগানের মধ্য দিয়া একটা মাঠে লইয়া গেল। কত চষা মাঠ জমি জলা বাঁশঝাড় পার হইয়া গেলাম, কিন্তু গাঁয়ের নামগন্ধও পাইলাম না। এমনি করিয়া তিন ঘণ্টা ঘুরিয়া গাঁয়ের কাছাকাছি হইতেই সে বেটা যে কোথায় পালাইল খোঁজ পাইলাম না।
প্রথম। সে বেটাকে দেখিয়াই আমার ভালো ঠেকে নাই।
দ্বিতীয়। আমিও মনে করিয়াছিলাম এইরকম একটা কিছু হইবেই।
তৃতীয়। যখনই দেখিয়াছি নেড়ে, তখনই আমার সন্দেহ হইয়াছে।
অবশেষে সকলেই ব্যক্ত করিল যে তাহারা পূর্ব হইতেই সমস্ত বুঝিতে পারিয়াছিল।
প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “দেখো দেখি মন্ত্রী, সে পাঠান দুটা এখনও আসিল না।”
মন্ত্রী ধীরে ধীরে কহিলেন, “সেটা তো আর আমার দোষ নয় মহারাজ।”
প্রতাপাদিত্য বিরক্ত হইয়া কহিলেন, “দোষের কথা হইতেছে না। দেরি যে হইতেছে তাহার তো একটা কারণ আছে? তুমি কী অনুমান কর, তাহাই জিজ্ঞাসা করিতেছি।”
মন্ত্রী। শিমুলতলি এখান হইতে বিস্তর দূর। যাইতে, কাজ সমাধা করিতে ও ফিরিয়া আসিতে বিলম্ব হইবার কথা।
প্রতাপাদিত্য মন্ত্রীর কথায় অসন্তুষ্ট হইলেন। তিনি চান, তিনিও যাহা অনুমান করিতেছেন, মন্ত্রীও তাহাই অনুমান করেন। কিন্তু মন্ত্রী সেদিক দিয়া গেলেন না।
প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “উদয়াদিত্য কাল রাত্রে বাহির হইয়া গেছে?”
মন্ত্রী। আজ্ঞা হাঁ, সে তো পূর্বেই জানাইয়াছি।
প্রতাপাদিত্য। পূর্বেই জানাইয়াছি! কী উপযুক্ত সময়েই জানাইয়াছ! যে সময়ে হউক জানাইলেই বুঝি তোমার কাজ শেষ হইল? উদয়াদিত্য তো পূর্বে এমনতরো ছিল না। শ্রীপুরের জমিদারের মেয়ে বোধ করি তাহাকে কুপরামর্শ দিয়া থাকিবে। কী বোধ হয়?
মন্ত্রী। কেমন করিয়া বলিব মহারাজ?
প্রতাপাদিত্য বলিয়া উঠিলেন, “তোমার কাছে কি আমি বেদবাক্য শুনিতে চাহিতেছি? তুমি কী আন্দাজ কর, তাই বলো-না!”
মন্ত্রী। আপনি মহিষীর কাছে বধূমাতা ঠাকুরানীর কথা সমস্তই শুনিতে পান, এ-বিষয়ে আপনি অনুমান করিতে পারেন, আমি কেমন করিয়া অনুমান করিব?
এক জন পাঠান গৃহে প্রবেশ করিল।
প্রতাপাদিত্য বলিয়া উঠিলেন, “কী হইল? কাজ নিকাশ করিয়াছ?”
পাঠান। হাঁ, মহারাজ, এতক্ষণে নিকাশ হইয়া গেছে।