সেই তো আমার শিশুকালের শিউলিফুলের কোলে
শুভ্র শিশির দোলে ;
সেই তো আমার মুগ্ধ চোখের প্রথম আলো,
এই ভুবনের সকল ভালোর প্রথম ভালো।
মনে পড়ে, ঘুমের থেকে যেমনি জেগে ওঠা
অমনি ওদের বাড়ির পানে ছোটা।
ওরই সঙ্গে শুরু হত দিনের প্রথম খেলা ;
মনে পড়ে, পিঠের ' পরে চুলটি মেলা
সেই আনন্দমূর্তিখানি, স্নিগ্ধ ডাগর আঁখি,
কণ্ঠ তাহার সুধায় মাখামাখি।
অসীম ধৈর্যে সইত সে মোর হাজার অত্যাচার
সকল কথায় মানত মনু হার।
উঠে গাছের আগডালেতে দোলা খেতেম জোরে,
ভয় দেখাতেম পড়ি-পড়ি ক ' রে,
কাঁদো-কাঁদো কণ্ঠে তাহার করুণ মিনতি সে,
ভুলতে পারি কি সে।
মনে পড়ে, নীরব ব্যথা তার,
বাবার কাছে যখন খেতেম মার ;
ফেলেছে সে কত চোখের জল,
মোর অপরাধ ঢাকা দিতে খুঁজত কত ছল।
আরো কিছু বড়ো হলে
আমার কাছে নিত সে তার বাংলা পড়া বলে।
নামতাটা তার কেবল যেত বেধে,
তাই নিয়ে মোর একটু হাসি সইত না সে, উঠত লাজে কেঁদে।
আমার হাতে মোটা মোটা ইংরেজি বই দেখে
ভাবত মনে, গেছে যেন কোন্ আকাশে ঠেকে
রাশীকৃত মোর বিদ্যার বোঝা।
যা-কিছু সব বিষম কঠিন, আমার কাছে যেন নেহাত সোজা।
হেনকালে হঠাৎ সেবার,
দশমীতে দ্বারিগ্রামে ঠাকুর ভাসান দেবার
রাস্তা নিয়ে দুই পক্ষের চাকর-দরোয়ানে
বকাবকি লাঠালাঠি বেধে গেল গলির মধ্যখানে।