তখন শম্ভু পাল্কীর সেই ভাঙা ডাণ্ডাখানা তুলে নিয়ে ওদের দিকে ছুঁড়ে মারলে। তারি এক ঘায়ে তিন জন একসঙ্গে প’ড়ে গেল। তার পরে শম্ভু লাঠি ঘুরিয়ে যেই ওদের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়লো বাকি দুজনে দিল দৌড়।
তখন ডাক্তারবাবু ডাকলেন,”শম্ভু!”
শম্ভু বললে, “আজ্ঞে!”
বিশ্বম্ভরবাবু বললেন, “এইবার বাক্সটা বের করো।”
শম্ভু বললে, “কেন, বাক্স নিয়ে কী হবে?
ডাক্তার বললেন, ঐ তিনটে লোকের ডাক্তারী করা চাই। ব্যাণ্ডেজ বাঁধতে হবে।”
রাত্রি তখন অল্পই বাকী। বিশ্বম্ভরবাবু আর শম্ভু দুজনে মিলে তিন জনের শুশ্রূষা করলেন।
সকাল হয়েছে। ছিন্ন মেঘের মধ্যে দিয়ে সূর্য্যের রশ্মি ফেটে পড়ছে। একে একে সব বেহারা ফিরে আসে। বল্গু এল, পল্লু এল, বক্সির হাত ধরে এল বিষ্ণু, তখনো তার হৃৎপিণ্ড কম্পমান।
ষ্টীমার আসিছে ঘাটে, প’ড়ে আসে বেলা,
পূজার ছুটির দল, লোকজন মেলা
এলো দূর দেশ হ’তে; বৎসরের পরে
ফিরে আসে যে-যাহার আপনার ঘরে।
জাহাজের ছাদে ভীড়; নানা লোকে নানা
মাদুরে কম্বলে লেপে পেতেচে বিছানা
ঠেসাঠেসি ক’রে। তারি মাঝে হরেরাম
মাথা নেড়ে বাজাইতেছে হারমোনিয়াম।
বোঝা আছে কত শত— বাক্স কত রূপ
টিন বেত চামড়ার, পুঁটুলির স্তূপ,
থলি ঝুলি ক্যাম্বিশের, ডালা ঝুড়ি ধামা
সব্জিতে ভরা। গায়ে রেশমের জামা,
কোমরে চাদর বাঁধা, চন্ডী অবিনাশ
কলিকাতা হ’তে আসে,বঙ্কু শ্যামদাস
অম্বিকা অক্ষয়; নূতন চীনের জুতো
করে মস্মস্, মেরে কুনুয়ের গুঁতা
ভিড় ঠেলে আগে চলে— হাতে বাঁধা ঘড়ি,
চোখেতে চশমা কারো, সরু এক ছড়ি
সবেগে দুলায়। ঘন ঘন ডাক ছাড়ে
ষ্টীমারের বাঁশি; কে পড়ে কাহার ঘাড়ে,
সবাই সবার আগে যেতে চায় চ’লে—