ঠেলাঠেলি, বকাবকি। শিশু মার কোলে
চীৎকারস্বরে কাঁদে। গড় গড় করে
নোঙর ডুবিল জলে; শিকলের ডোরে
জাহাজ পড়িল বাঁধা; সিঁড়ি গেল নেমে,
এঞ্জিনের ধকধকি সব গেল থেমে।
‘কুলি’ ‘কুলি’ ডাক পড়ে ডাঙা হ’তে মুটে
দুড়দাড় ক’রে এলো দলে দলে ছুটে।
তীরে বাজাইয়া হাঁড়ি গাহিছে ভজন
অন্ধ বেণী। যাত্রীদের আত্মীয় স্বজন।
অপেক্ষা করিয়া আছে; নাম ধ’রে ডাকে,
খুঁজে খুঁজে বের করে যে চায় যাহাকে।
চলিল গোরুর গাড়ি, চলে পালকী ডুলি,
শ্যাক্রা-গাড়ির ঘোড়া উড়াইল ধূলি।
সূর্য গেল অস্তাচলে; আঁধার ঘনালো;
হেথা হোথা কেরোসিন লন্ঠনের আলো
দুলিতে দুলিতে যায়, তার পিছে পিছে
মাথায় বোঝাই নিয়ে মুটেরা চলিছে।
শূন্য হয়ে গেল তীর। আকাশের কোণে
পঞ্চমীর চাঁদ ওঠে। দূরে বাঁশবনে
শেয়াল উঠিল ডেকে। মুদির দোকানে
টিম্ টিম্ ক’রে দীপ জ্বলে একখানে॥
উদ্ধব মন্ডল জাতিতে সদ্গোপ। তার অত্যন্ত দরিদ্র অবস্থা। ভূসম্পত্তি যা কিছু ছিল ঋণের দায়ে বিক্রয় হয়ে গেছে। এখন মজুরী করে কায়ক্লেশে তার দিনপাত হয়।
এ দিকে তার কন্যা নিস্তারিনীর বিবাহ। বরের নাম বটকৃষ্ণ। তার অবস্থা মন্দ নয়। ক্ষেতের উৎপন্ন শস্য দিয়ে সহজেই সংসারনির্বাহ হয়। বাড়িতে পূজা-অর্চনা ক্রিয়াকর্মও আছে।
আগামী কাল উনিশে জ্যৈষ্ঠ বিবাহের দিন। বরযাত্রীর দল আসবে। তার জন্যে আহারাদির উদ্যোগ করা চাই। পাড়ার লোকে কিছু কিছু সাহায্য করেছে। অভাব তবু যথেষ্ট।
পাড়ার প্রান্তে একটি বড়ো পুষ্করিণী। তার নাম পদ্মপুকুর। বর্তমান ভূস্বামী দুর্লভবাবুর পূর্বপুরুষদের আমলে এই পুষ্করিণী