আছে। ওঁরা বলেন, কথা কওয়াটা মানুষের বানানো। ওটা প্রকৃতিদত্ত নয়। ওতে প্রতিদিন শ্বাসের ক্ষয় হতে থাকে, সেই শ্বাসক্ষয়েই আয়ুক্ষয়। স্বাভাবিক প্রতিভায় এ কথাটা গোড়াতেই আবিষ্কার করেছে বানর। ত্রেতাযুগের হনুমান আজও আছে বেঁচে। আজ ওঁরা নিরালায় বসে সেই বিশুদ্ধ আদিম বুদ্ধির অনুসরণ করছেন। মাটির দিকে মুখ করে সবাই একেবারে চুপ। সমস্ত দ্বীপটাতে কেবল নাকের থেকে হাঁচির শব্দ বেরোয়, মুখের থেকে কোনো শব্দই নেই।
পরস্পর বোঝাপড়া চলে কী করে।
অত্যাশ্চর্য ইশারার ভাষা উদ্ভাবিত। — কখনো ঢেঁকি - কোটার ভঙ্গিতে, কখনো হাতপাখা - চালানোর চালে, কখনো ঝোড়ো সুপুরি গাছের নকলে ডাইনে বাঁয়ে উপরে নীচে ঘাড় দুলিয়ে বাঁকিয়ে নাড়িয়ে কাঁপিয়ে হেলিয়ে ঝাঁকিয়ে। এমন - কি, সেই ভাষার সঙ্গে ভুরু - বাঁকানি চোখ - টেপানি যোগ করে ওঁদের কবিতার কাজও চলে। দেখা গেছে, তাতে দর্শকের চোখে জল আসে, নস্যির জায়গাটা বদ্ধ হয়ে পড়ে।
কিছু টাকা আমাকে ধার দাও, দোহাই তোমার। ঐ হুঁহাউ দ্বীপেই যেতে হচ্ছে আমাকে। এতবড়ো নতুন মজাটা —
নতুন আর পুরোনো হতে পেল কই। হাঁচতে হাঁচতে বস্তিটা বেবাক ফাঁক হয়ে গেছে। পড়ে আছে জালা - জালা সবুজ নস্যি। ব্যবহার করবার যোগ্য নাক বাকি নেই একটাও।
এ তোমার আগাগোড়াই বানানো। বিজ্ঞানের ঠাট্টার পক্ষেও এটা বাড়াবাড়ি শোনাচ্ছে। এই হুঁহাউ দ্বীপের ইতিহাস বানিয়ে তুমি পুপেদিদিকে তাক লাগিয়ে দিতে চাও। ঠিক করেছিলে, তোমার এই অভাগা সে - নামওয়ালাকেই বৈজ্ঞানিক সাজিয়ে সারা দ্বীপময় হাঁচিয়ে হাঁচিয়ে মারবে। বর্ণনা করবে,আমি ঘাড় - নাড়ানাড়ির ঘটাকরে ঘটোৎকচ - বধ পাঁচালির আসর জমাচ্ছি কী করে।
হয়তো কোন্ হামাগুড়িওয়ালি মনোহর - ঘাড় - নাড়ানির সঙ্গে আমার বিয়ে দিয়ে বসবে, ঘাড়নাড়া - মন্ত্রে কনে নাড়বে মাথা বাঁ দিক থেকে ডান দিকে, আর আমি নাড়ব ডান দিক থেকে বাঁ দিকে। সপ্তপদী - গমন উঠবে চতুর্দশপদী। ওদের সেনেট হলে ঘাড়নাড়া ভাষায় যখন ওরা সারে সারে পরীক্ষা দিতে বসেছে, তার মধ্যে আমাকেও বসাবে এক কোণে। আমার উপর তোমার দয়ামায়া নেই, দেবে ফেল করিয়ে। কিন্তু ওদের স্পোর্টিং ক্লাবে হামাগুড়ি - রেসে আমাকেই পাওয়াবে ফাস্ট্ প্রাইজ। বলে দিচ্ছি, পুপেদিদিকে এমন করে হাসাতে পারবে মনেও কোরো না।
বেশি বোকো না। চাণক্যপণ্ডিত শ্রেণীবিশেষের আয়ুবৃদ্ধির জন্যে বলেছেন : তাবচ্চ বাঁচতে মূর্খ যাবৎ ন বক্বকায়তে। — তুমি তো সংস্কৃত কিছু শিখেছিলে?