Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)


বাঁশরি - প্রথম অঙ্ক - তৃতীয় দৃশ্য, ১৭
বাঁশরি
গান

নন্দা।                               না চাহিলে যারে পাওয়া যায়,

    তেয়াগিলে আসে হাতে,
দিবসে সে-ধন হারায়েছি আমি
    পেয়েছি আঁধার রাতে।
না দেখিবে তারে পরশিবে না গো,
তারি পানে প্রাণ মেলে দিয়ে জাগো,
তারায় তারায় রবে তারি বাণী,
    কুসুমে ফুটিবে প্রাতে॥
তারি লাগি যত ফেলেছি অশ্রুজল,
বীণাবাদিনীর শতদলদলে
    করিছে সে টলমল।
মোর গানে গানে পলকে পলকে
ঝলসি উঠিছে ঝলক ঝলকে,
শান্ত হাসির করুণ আলোক
    ভাতিছে নয়নপাতে॥
পুরন্দরের প্রবেশ

সুষমা। (ভূমিষ্ঠ প্রণাম করে) প্রভু, দুর্বল আমি। মনের গোপনে যদি পাপ থাকে ধুয়ে দাও, মুছে দাও। আসক্তি দূর হোক, জয়যুক্ত হোক তোমার বাণী।

পুরন্দর। বৎসে, নিজেকে নিন্দা কোরো না, অবিশ্বাস কোরো না, নাত্মানমবসাদয়েৎ। ভয় নেই, কোনো ভয় নেই। আজ তোমার মধ্যে সত্যের আবির্ভাব হয়েছে মাধুর্যে, কাল সেই সত্য অনাবৃত করবে আপন জগজ্জয়িনী বীরশক্তি।

সুষমা। আজ সন্ধ্যায় এইখানে তোমার প্রসন্নদৃষ্টির সামনে আমার নূতন জীবন আরম্ভ হল। তোমারই পথ হোক আমার পথ।

পুরন্দর। তোমাদের কাছ থেকে দূরে যাবার সময় আসন্ন হয়েছে।

সুষমা। দয়া করো প্রভু, ত্যাগ কোরো না আমাকে। নিজের ভার আমি নিজে বহন করতে পারব না। তুমি চলে গেলে আমার সমস্ত শক্তি যাবে তোমারই সঙ্গে।

পুরন্দর। আমি দূরে গেলেই তোমার শক্তি তোমার মধ্যে ধ্রুবপ্রতিষ্ঠিত হবে। আমি তোমার হৃদয়দ্বার খুলে দিয়েছি নিজে স্থান নেব বলে নয়। যিনি আমার ব্রতপতি তিনি সেখানে স্থান গ্রহণ করুন। আমার দেবতা হোন তোমারই দেবতা, দুঃখকে ভয় নেই, আনন্দিত হও আত্মজয়ী আপনারই মধ্যে।
একটা কথা জিজ্ঞাসা করি, সোমশংকরের মহত্ত্ব তুমি আপন অন্তরের থেকে চিনতে পেরেছ?

সুষমা। পেরেছি।

পুরন্দর। সেই দুর্লভ মহত্ত্বকে তোমার দুর্লভ সেবার দ্বারা মূল্যদান করে গৌরবান্বিত করবে, তার বীর্যকে সর্বোচ্চ সার্থকতার