অমিত লাবণ্য দুজনে মিলে যোগমায়ার পায়ের ধুলো নিয়ে প্রণাম করলে। তিনি বললেন, “তোমরা একটু বোসো, আমি বাগান থেকে কিছু ফুল নিয়ে আসি গে।”
ব'লে গাড়ি করে ফুল আনতে গেলেন। অনেকক্ষণ দুইজনে খাটিয়াটার উপরে পাশাপাশি চুপ করে বসে রইল। এক সময়ে অমিতর মুখের দিকে মুখ তুলে লাবণ্য মৃদুস্বরে বললে, “আজ তুমি সমস্ত দিন গেলে না কেন?”
অমিত উত্তর দিলে, “কারণটা এত বেশি তুচ্ছ যে, আজকের দিনে সে কথাটা মুখে আনতে সাহসের দরকার। ইতিহাসে কোনোখানে লেখে না যে, হাতের কাছে বর্ষাতি ছিল না বলে বাদলার দিনে প্রেমিক তার প্রিয়ার কাছে যাওয়া মুলতবি রেখেছে। বরঞ্চ লেখা আছে সাঁতার দিয়ে অগাধ জল পার হওয়ার কথা। কিন্তু সেটা অন্তরের ইতিহাস, সেখানকার সমুদ্রে আমিও কি সাঁতার কাটছি নে ভাবছ। সে অকূল কোনোকালে কি পার হব।
And we will risk the ship, ourselves and all.
আমরা যাব যেখানে কোনো
যায় নি নেয়ে সাহস করি।
ডুবি যদি তো ডুবি-না কেন—
ডুবুক সবই, ডুবুক তরী।
বন্যা, আমার জন্যে আজ তুমি অপেক্ষা করে ছিলে?”
“হাঁ মিতা, বৃষ্টির শব্দে সমস্ত দিন যেন তোমার পায়ের শব্দ শুনেছি। মনে হয়েছে, কত অসম্ভব দূর থেকে যে আসছ তার ঠিক নেই। শেষকালে তো এসে পৌঁছলে আমার জীবনে।”
“বন্যা, আমার জীবনের মাঝখানটিতে ছিল এতকাল তোমাকে-না-জানার একটা প্রকাণ্ড কালো গর্ত। ঐখানটা ছিল সব চেয়ে কুশ্রী। আজ সেটা কানা ছাপিয়ে ভরে উঠল—তারই উপরে আলো ঝল্মল্ করে, সমস্ত আকাশের ছায়া পড়ে, আজ সেইখানটাই হয়েছে সব চেয়ে সুন্দর। এই-যে আমি ক্রমাগতই কথা কয়ে যাচ্ছি, এ হচ্ছে ঐ পরিপূর্ণ প্রাণসরোবরের তরঙ্গধ্বনি; একে থামায় কে।”
“মিতা, তুমি আজ সমস্ত দিন কী করছিলে।”
“মনের মাঝখানটাতে তুমি ছিলে, একেবারে নিস্তব্ধ। তোমাকে কিছু বলতে যাচ্ছিলুম— কোথায় সেই কথা? আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে আর আমি কেবলই বলেছি, কথা দাও, কথা দাও!
Mysterious and uncapturable bliss
That I have known, yet seems to be
Simple as breath and easy as a smile,
And older than the earth.
একি রহস্য, একি আনন্দরাশি!
জেনেছি তাহারে, পাই নি তবুও পেয়ে।