তখন তার গলাটা পেয়েছি দখলে; বললুম, তোমার হবে না জায়গা, আমার হবে। বেরোও তুমি।
সে গোঁ গোঁ করতে করতে বললে, অনেকখানি বেরিয়েছি, একটু বাকি। ঠেলা মারো।
দিলুম ঠেলা, হুস করে গেল বেরিয়ে।
এ দিকে পাতুখুড়োর গিন্নি এসে বললে, বলি, ও পোড়ারমুখো।
কান জুড়িয়ে গেল। বললুম, বলো বলো, আবার বলো, বড়ো মিষ্টি লাগছে, এমন ডাক যে আবার কোনোদিন শুনতে পাব এমন আশাই ছিল না।
বুড়ি ভাবলে ঠাট্টা করছি, ঝাঁটা আনতে গেল ঘরের মধ্যে। ভয় হল, পড়ে-পাওয়া দেহটা খোয়াই বুঝি। বাসায় এসে আয়নাতে মুখ দেখলুম, সমস্ত শরীর উঠল শিউরে। ইচ্ছে করল র্যাঁদা দিয়ে মুখটাকে ছুলে নিই।
গা-হারার গা এল, কিন্তু চেহারা-হারার চেহারাখানা সাত বাঁও জলের তলায়, তাকে ফিরে পাবার কী উপায়।
ঠিক এই সময়ে দীর্ঘ বিচ্ছেদের পর খিদেটাকে পাওয়া গেল। একেবারে জঠর জুড়ে। সব কটা নাড়ী চোঁ চোঁ করে উঠেছে এক সঙ্গে। চোখে দেখতে পাই নে পেটের জ্বালায়। যাকে পাই তাকে খাই গোছের অবস্থা। উঃ, কী আনন্দ।
মনে পড়ল, তোমার ঘরে পুপুদিদির নেমন্তন্ন। রেলভাড়ার পয়সা নেই। হেঁটে চলতে শুরু করলুম। চলার অসম্ভব মেহন্নতে কী যে আরাম সে আর কী বলব। স্ফূর্তিতে একেবারে গলদ্ঘর্ম। এক এক পা ফেলছি আর মনে মনে বলছি, থামছি নে, থামছি নে, চলছি তো চলছিই। এমন বেদম চলা জীবনে কখনো হয় নি। দাদা, পুরো একখানা গা নিয়ে বসে আছ কেদারায়, বুঝতেই পার না কষ্টতে যে কী মজা। এই কষ্টে বুঝতে পারা যায়, আছি বটে, খুব কষে আছি, ষোলো-আনা পেরিয়ে গিয়ে আছি।
আমি বললুম, সব বুঝলুম, এখন কী করতে চাও বলো।
করবার দায় তোমারই, নেমন্তন্ন করেছিলে, খাওয়াতে হবে, সে কথা ভুললে চলবে না।
রাত এখন তিনটে সে কথা তুমিও ভুললে চলবে না।
তা হলে চললুম পুপুদিদির কাছে।
খবরদার!
দাদা, ভয় দেখাচ্ছ মিছে, মরার বাড়া গাল নেই। চললুম।
কিছুতেই না।
সে বললে, যাবই।
আমি বললুম, কেমন যাও দেখব।
সে বলতে লাগল, যাবই, যাবই, যাবই।
আমার টেবিলের উপর চড়ে নাচতে নাচতে বললে, যাবই, যাবই, যাবই।
শেষকালে পাঁচালির সুর লাগিয়ে গাইতে লাগল, যাবই, যাবই, যাবই।
আর থাকতে পারলুম না। ধরলুম ওর লম্বা চুলের ঝুঁটি। টানাটানিতে গা থেকে, ঢিলে মোজার মতো, দেহটা সর্সর্ করে খসে ধপ্ করে পড়ে গেল।
সর্বনাশ! গাঁজাখোরের আত্মাপুরুষকে খবর দিই কী করে। চেঁচিয়ে বলে উঠলুম, আরে আরে, শোনো শোনো, ঢুকে পড়ো এই
গা’টার মধ্যে, নিয়ে যাও এটাকে।
কেউ কোথাও নেই। ভাবছি, আনন্দবাজারে বিজ্ঞাপন দেব।