Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)


মুকুট - দ্বিতীয় অঙ্ক - ষষ্ঠ দৃশ্য, ১৯
মুকুট
ষষ্ঠ দৃশ্য
রণক্ষেত্র
ইশা খাঁ ও যুবরাজ

ইশা খাঁ। যুবরাজ, আল্লাকে স্মরণ করো। আজ বড়ো শক্ত সময় এসেছে।

যুবরাজ। শক্তটা কিসের খাঁ সাহেব! ভগবানের যখন ইচ্ছা হয় তখন মরাও শক্ত নয়, বাঁচাও শক্ত নয়-সবই সহজ।

ইশা খাঁ। মহারাজ আমার হাতে তোমাদের দিয়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন, সেইজন্যেই মনে আক্ষেপ হচ্ছে। নইলে যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু তো বিবাহশয্যায় নিদ্রা। যুবরাজ, তুমি পালাবার চেষ্টা করো—যুদ্ধের ভার আমার উপর রইল।

যুবরাজ। তুমি আমাদের অস্ত্রগুরু, তোমার মুখে এ উপদেশ সাজে না। তা ছাড়া পথই বা কোথায়? আজ মরবার যেমন চমৎকার সুযোগ হয়েছে পালাবার তেমন নয়।

ইশা খাঁ। কিন্তু বাবা, মনের মধ্যে একটা আগুন জ্বলছে। ইন্দ্রকুমার যে অভিমান করে দূরে চলে গেল, তার এই অপরাধের শাস্তি দেবার জন্যে আমি হয়তো বেঁচে থাকব না।

যুবরাজ। যদি বেঁচে না থাক সেনাপতি, তা হলে তার শাস্তি আরো ঢের বেশি হবে। সে-যে তোমাকে পিতার মতো জানে।

ইশা খাঁ। আল্লা! সে কথা সত্য। বাবা, আজ বুঝছি আমার সময় হবে না। কিন্তু যদি তোমার সুযোগ হয় তবে তাকে বোলো, যদি ইশা খাঁ বেঁচে থাকত তবে তাকে শাস্তি দিত, কিন্তু মরবার আগে তাকে ক্ষমা করে মরেছে। বাস, আর সময় নেই—চললুম বাবা। এসো, একবার আলিঙ্গন করে যাই। আল্লার হাতে দিয়ে গেলুম, তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন।

যুবরাজ। খাঁ সাহেব, কতদিন কত অপরাধ করেছি, আজ সমস্ত মার্জনা করে যাও।

ইশা খাঁ। বাবা, জন্মকাল থেকে তোমাকে দেখছি, কোনোদিন কোনো অপরাধ তুমি জমতে দাও নি, হাতে হাতে সমস্তই নিকাশ করে দিয়েছ।—আজ মার্জনা করব এমন তো কিছুই রাখ নি। তোমার নির্মল প্রাণ আজ যদি নেন তবে তাঁর স্বর্গোদ্যানের কোনো ফুলের কাছেই সে ম্লান হবে না।