Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)


নবীন- প্রথম পর্ব,১
নবীন
প্রথম পর্ব

বাসন্তী, হে ভুবনমোহিনী,

দিকপ্রান্তে, বনপ্রান্তে,

শ্যাম প্রান্তরে, আম্রছায়ে,

সরোবরতীরে, নদীনীরে,

নীল আকাশে, মলয়বাতাসে

ব্যাপিল অনন্ত তব মাধুরী।

নগরে গ্রামে কাননে,

দিনে নিশীথে,

পিকসংগীতে নৃত্যগীতকলনে

বিশ্ব আনন্দিত —

ভবনে ভবনে

বীণাতান রণ-রণ ঝংকৃত।

মধুমদমোদিত হৃদয়ে হৃদয়ে রে

নবপ্রাণ উচ্ছ্বসিল আজি,

বিচলিত চিত উচ্ছলি উন্মাদনা

ঝন-ঝন ঝনিল মঞ্জীরে মঞ্জীরে॥

 

শুনেছ অলিমালা, ওরা ধিক্‌কার দিচ্ছে ঐ ও পাড়ার মল্লের দল ; তোমাদের চাপল্য তাদের ভালো লাগছে না। শৈবালগুচ্ছবিলম্বী ভারী ভারী সব কালো কালো পাথরগুলোর মতো তমিস্রগহন গাম্ভীর্যে ওরা গুহাদ্বারে ভ্রূকুটি পুঞ্জিত করে বসে আছে। কলহাস্যচঞ্চলা নির্ঝরিণী ওদের নিষেধ লঙ্ঘন করেই বেরিয়ে পড়ুক এই আনন্দময় বিশ্বের আনন্দপ্রবাহ দিকে দিগন্তে বইয়ে দিতে, নাচে গানে কল্লোলে হিল্লোলে ; চূর্ণ চূর্ণ সূর্যের আলো উদ্‌বেল তরঙ্গভঙ্গের অঞ্জলিবিক্ষেপে ছড়িয়ে ছড়িয়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যেতে। এই আনন্দ-আবেগের অন্তরে অন্তরে যে অক্ষয় শৌর্যের অনুপ্রেরণা আছে সেটা ও পাড়ার শাস্ত্রবচনের বেড়া এড়িয়ে চলে গেল। ভয় কোরো না তোমরা, যে রসরাজের নিমন্ত্রণে এসেছ তাঁর প্রসন্নতা যেমন আজ নেমেছে আমাদের নিকুঞ্জে ঐ অন্তঃস্মিত গন্ধরাজমুকুলের প্রচ্ছন্ন গন্ধরেণুতে, তেমনি নামুক তোমাদের কণ্ঠে, তোমাদের দেহলতার নিরুদ্ধনটনোৎসাহে। সেই যিনি সুরের গুরু, তাঁরই চরণে তোমাদের নৃত্যের নৈবেদ্য আজ নির্ঝরিত করে দাও।

 

সুরের গুরু, দাও গো সুরের দীক্ষা —

মোরা সুরের কাঙাল, এই আমাদের ভিক্ষা।