Published on রবীন্দ্র রচনাবলী (http://xn--u5bxfcqewdax4kraj7ob.xn--45brj9c)
বিসর্জন- উৎসর্গ, ১
উৎসর্গ
শ্রীমান সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রাণাধিকেষু
তোরি হাতে বাঁধা
খাতা,
তারি শ-খানেক পাতা
অক্ষরেতে ফেলিয়াছি ঢেকে,
মস্তিষ্ককোটরবাসী চিন্তাকীট রাশি রাশি
পদচিহ্ন গেছে যেন রেখে।
প্রবাসে প্রত্যহ তোরে হৃদয়ে স্মরণ করে
লিখিয়াছি নির্জন প্রভাতে,
মনে করি অবশেষে শেষ হলে ফিরে দেশে
জন্মদিনে দিব তোর হাতে।
কাগজ-পত্তর ছড়াছড়ি।
দশ দিকে বইগুলি সঞ্চয় করিছে ধূলি,
আলস্যে যেতেছে গড়াগড়ি।
শয্যাহীন খাটখানা এক পাশে দেয় থানা,
প্রকাশিয়া কাঠের পাঁজর।
তারি ’পরে অবিচারে যাহা-তাহা ভারে ভারে
স্তূপাকারে সহে অনাদর।
মাঝে মাঝে বেধে আছে জল,
এক ধারে রাশ রাশ অর্ধমগ্ন দীর্ঘ বাঁশ,
তারি ’পরে বালকের দল।
ধরে মাছ, মারে ঢেলা— সারাদিন করে খেলা
উভচর মানবশাবক।
মেয়েরা মাজিছে গাত্র অথবা কাঁসার পাত্র
সোনার মতন ঝক্ ঝক্।
শুষ্ক সেই জলপথ-মাঝে—
অক্ষরেতে ফেলিয়াছি ঢেকে,
মস্তিষ্ককোটরবাসী চিন্তাকীট রাশি রাশি
পদচিহ্ন গেছে যেন রেখে।
প্রবাসে প্রত্যহ তোরে হৃদয়ে স্মরণ করে
লিখিয়াছি নির্জন প্রভাতে,
মনে করি অবশেষে শেষ হলে ফিরে দেশে
জন্মদিনে দিব তোর হাতে।
বর্ণনাটা করি শোন্— একা আমি, গৃহকোণ,
কাগজ-পত্তর ছড়াছড়ি।
দশ দিকে বইগুলি সঞ্চয় করিছে ধূলি,
আলস্যে যেতেছে গড়াগড়ি।
শয্যাহীন খাটখানা এক পাশে দেয় থানা,
প্রকাশিয়া কাঠের পাঁজর।
তারি ’পরে অবিচারে যাহা-তাহা ভারে ভারে
স্তূপাকারে সহে অনাদর।
চেয়ে দেখি জানালায় খালখানা শুষ্কপ্রায়,
মাঝে মাঝে বেধে আছে জল,
এক ধারে রাশ রাশ অর্ধমগ্ন দীর্ঘ বাঁশ,
তারি ’পরে বালকের দল।
ধরে মাছ, মারে ঢেলা— সারাদিন করে খেলা
উভচর মানবশাবক।
মেয়েরা মাজিছে গাত্র অথবা কাঁসার পাত্র
সোনার মতন ঝক্ ঝক্।
উত্তরে যেতেছে দেখা পড়েছে পথের রেখা
শুষ্ক সেই জলপথ-মাঝে—