কে আছে নাম ধরে মোর ডাকতে পারে।
যদি সে বারেক এসে দাঁড়ায় হেসে
চিনতে পারি দেখে তারে॥
দূরে অপর্ণার প্রবেশ
ওকি ও অপর্ণা, দূরে দাঁড়াইয়া কেন!
শুনিতেছ অবাক হইয়া, জয়সিংহ
গান গাহে? সব মিথ্যা, বৃহৎ বঞ্চনা,
তাই হাসিতেছি — তাই গাহিতেছি গান।
ওই দেখো পথ দিয়ে তাই চলিতেছে
লোক নির্ভাবনা, তাই ছোটো কথা নিয়ে
এতই কৌতুকহাসি, এত কুতূহল,
তাই এত যত্নভরে সেজেছে যুবতী।
সত্য যদি হত, তবে হত কি এমন?
সহজে আনন্দ এত বহিত কি হেথা?
তাহা হলে বেদনায় বিদীর্ণ ধরায়,
বিশ্বব্যাপী ব্যাকুল ক্রন্দন থেমে গিয়ে
মূক হয়ে রহিত অনন্তকাল ধরি।
বাঁশি যদি সত্যই কাঁদিত বেদনায়,
ফেটে গিয়ে সংগীত নীরব হত তার।
মিথ্যা বলে তাই এত হাসি — শ্মশানের
কোলে বসে খেলা, বেদনার পাশে শুয়ে
গান, হিংসা-ব্যাঘ্রিণীর খরনখতলে
চলিতেছে প্রতিদিবসের কর্মকাজ!
সত্য হলে এমন কি হত? হা অপর্ণা,
তুমি আমি কিছু সত্য নই, তাই জেনে
সুখী হও — বিষণ্ন বিস্ময়ে, মুগ্ধ আঁখি
তুলে কেন রয়েছিস চেয়ে! আয় সখী,
চিরদিন চলে যাই দুই জনে মিলে
সংসারের 'পর দিয়ে, শূন্য নভস্তলে
দুই লঘু মেঘখণ্ড-সম।