নিস্তারিণী। আমার বোনপো'র ব্যামো ছিল বলেই যা আমি ক'দিন পুজো দিতে আসতে পারি নি।
গোবর্ধন। আমার পাঁঠা দুটো ঠাকরুনকেই দেব বলে অনেক দিন থেকে মনে করে রেখেছিলুম, এরই মধ্যে রাজা বলি বন্ধ করে দিলে তো আমি কী করব!
হারু। এই আমাদের গন্ধমাদন যা মানত করেছিল তা মাকে দেয় নি বটে, কিন্তু মাও তো তেমনি তাকে শাস্তি দিয়েছেন। তার পিলে বেড়ে ঢাক হয়ে উঠেছে — আজ ছ'টি মাস বিছানায় প'ড়ে। তা বেশ হয়েছে, আমাদেরই যেন সে মহাজন, তাই বলে কি মাকে ফাঁকি দিতে পারবে!
অক্রূর। চুপ কর্ তোরা। মিছে গোল করিস নে। আচ্ছা ঠাকুর, মা কেন চলে গেলেন, আমাদের কী অপরাধ হয়েছিল?
রঘুপতি। মার জন্যে এক ফোঁটা রক্ত দিতে পারিস নে, এই তো তোদের ভক্তি!
অনেকে। রাজার আজ্ঞা, তা আমরা কী করব?
রঘুপতি। রাজা কে? মার সিংহাসন তবে কি রাজার সিংহাসনের নীচে? তবে এই মাতৃহীন দেশে তোদের রাজাকে নিয়েই থাক্, দেখি তোদের রাজা কী করে রক্ষা করে।
সকলের সভয়ে গুন্গুন্ স্বরে কথা
অক্রূর। চুপ কর্।– সন্তান যদি অপরাধ করে থাকে মা তাকে দণ্ড দিক, কিন্তু একেবারে ছেড়ে চলে যাবে এ কি মা ' র মতো কাজ? বলে দাও কী করলে মা ফিরবে।
রঘুপতি। তোদের রাজা যখন রাজ্য ছেড়ে যাবে, মাও তখন রাজ্যে ফিরে পদার্পণ করবে।
নিস্তব্ধভাবে পরস্পরের মুখাবলোকন
রঘুপতি। তবে তোরা দেখবি? এইখানে আয়। অনেক দূর থেকে অনেক আশা করে ঠাকরুনকে দেখতে এসেছিস, তবে একেবার চেয়ে দেখ্।
মন্দিরের দ্বার-উদ্ঘাটন। প্রতিমার পশ্চাদ্ভাগ দৃশ্যমান
সকলে। ও কী! মার মুখ কোন্ দিকে?
অক্রূর। ওরে, মা বিমুখ হয়েছেন!
সকলে। ও মা, ফিরে দাঁড়া মা! ফিরে দাঁড়া মা! ফিরে দাঁড়া মা! একবার ফিরে দাঁড়া! মা কোথায়! মা কোথায়! আমরা তোকে ফিরিয়ে আনব মা! আমরা তোকে ছাড়ব না। চাই নে আমাদের রাজা। যাক রাজা! মরুক রাজা!
রঘুপতির নিকট আসিয়া
জয়সিংহ। প্রভু, আমি কি একটিও কথাও কব না?
রঘুপতি। না।
জয়সিংহ। সন্দেহের কি কোনো কারণ নেই?
রঘুপতি। না।
জয়সিংহ। সমস্তই কি বিশ্বাস করব?
রঘুপতি। হাঁ।