অপর্ণা। হায় জয়সিংহ, বলিতে পারি নে কিছু —
বুঝি মনে আছে কত কথা।
জয়সিংহ। তবে আরো
কাছে আয়। মন হতে মনে যাক কথা —
এ কী করিতেছি আমি! অপর্ণা, অপর্ণা,
চলে যা মন্দির ছেড়ে! গুরুর আদেশ!
অপর্ণা। জয়সিংহ, হোয়ো না নিষ্ঠুর! বার বার
ফিরায়ো না! কী সহেছি অন্তর্যামী জানে!
জয়সিংহ। তবে আমি যাই। এক দণ্ড হেথা নহে।
কিয়দ্দূর গিয়া ফিরিয়া
অপর্ণা, নিষ্ঠুর আমি? এই কি রহিবে
তোর মনে, জয়সিংহ নিষ্ঠুর, কঠিন!
কখনো কি হাসিমুখে কহি নাই কথা?
কখনো কি ডাকি নাই কাছে? কখনো কি
ফেলি নাই অশ্রুজল তোর অশ্রু দেখে?
অপর্ণা, সে-সব কথা পড়িবে না মনে,
শুধু মনে রহিবে জাগিয়া জয়সিংহ
নিষ্ঠুর পাষাণ? যেমন পাষাণ ওই
পাষাণের ছবি, দেবী বলিতাম যারে?—
হায় দেবী, তুই যদি দেবী হইতিস,
তুই যদি বুঝিতিস এই অন্তর্দাহ!
অপর্ণা। বুদ্ধিহীন ব্যথিত এ ক্ষুদ্র নারী-হিয়া
ক্ষমা করো এরে। এই বেলা চলে এসো,
জয়সিংহ, এসো মোরা এ মন্দির ছেড়ে
যাই।
জয়সিংহ। রক্ষা করো! অপর্ণা, করুণা করো!
দয়া করে, মোরে ফেলে চলে যাও। এক
কাজ বাকি আছে এ জীবনে, সেই হোক
প্রাণেশ্বর — তার স্থান তুমি কাড়িয়ো না।
[ দ্রুত প্রস্থান