জয়সিংহ। থামো, থামো, থামো! —
মায়াবিনী, পিশাচিনী,
মাতৃহীন এ সংসারে এসেছিস তুই
মা ' র ছদ্মবেশ ধরে রক্তপানলোভে?
ক্ষুধিত বিহঙ্গশিশু অরক্ষিত নীড়ে
চেয়ে থাকে মা ' র প্রত্যাশায়, কাছে আসে
লুব্ধ কাক, ব্যগ্রকণ্ঠে অন্ধ শাবকেরা
মা মনে করিয়া তারে করে ডাকাডাকি,
হারায় কোমল প্রাণ হিংস্রচঞ্চুঘাতে —
তেমনি কি তোর ব্যবসায়? প্রেম মিথ্যা,
স্নেহ মিথ্যা, দয়া মিথ্যা, মিথ্যা আর-সব,
সত্য শুধু অনাদি অনন্ত হিংসা! তবে
কেন মেঘ হতে, ঝরে আশীর্বাদসম
বৃষ্টিধারা দগ্ধ ধরণীর বক্ষ-'পরে —
গলে আসে পাষাণ হইতে দয়াময়ী
স্রোতস্বিনী মরুমাঝে — কোটি কণ্টকের
শিরোভাগে, কেন ফুলে ওঠে বিকশিয়া?
ছলনা করেছ মোরে প্রভু! দেখিতেছ
মাতৃভক্তি রক্তসম হৃদয় টুটিয়া
ফেটে পড়ে কিনা আমারি হৃদয় বলি
দিলে মাতৃপদে। ওই দেখো হাসিতেছে
মা আমার স্নেহপরিহাসবশে। বটে,
তুই রাক্ষসী পাষাণী বটে, মা আমার
রক্ত-পিয়াসিনী! নিবি মা আমার রক্ত,
ঘুচাবি সন্তানজন্ম এ জন্মের তরে —
দিব ছুরি বুকে? এই শিরা-ছেঁড়া রক্ত
বড়ো কি লাগিবে ভালো? ওরে, মা আমার
রাক্ষসী পাষাণী বটে! ডাকিছ কি মোরে
গুরুদেব? ছলনা বুঝেছি আমি তব।
ভক্তহিয়া-বিদারিত এই রক্ত চাও!
দিয়েছিলে এই-যে বেদনা, তারি 'পরে
জননীর স্নেহহস্ত পড়িয়াছে। দুঃখ