এইখানে আর-একটা কথা বলে এই প্রসঙ্গে শেষ করে দেওয়া যাক। সকল বস্তুরই পরমাণুর ইলেকট্রন প্রোটন ঔ ন্যুট্রন একই পদার্থ। তাদেরই ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে বস্তুর ভেদ। যে-পরমাণুর আছে মোট ছয়টা পজিটিভ চার্জ সেই হল কার্বনের অর্থাৎ আঙ্গারিক বস্তুর পরমাণু। সাতটা ইলেকট্রনওয়ালা পরমাণু নাইট্রোজেনের, আটটা অক্সিজেনের। কেবল হাইড্রেজেন পরমাণুর আছে একটা ইলেকট্রন। আর বিরেনব্বইটা আছে য়ুরেনিয়মের। পরমাণুদের মধ্যে পজিটিভ চার্জের সংখ্যাভেদ নিয়েই তাদের জাতিভেদ। সৃষ্টির সমস্ত বৈচিত্র্যই সংখ্যার ছন্দে।
বৈদ্যুতসন্ধানীরা যখন আপন কাজে নিযুক্ত আছেন তখন তাদের হিসাবে গোলমাল বাধিয়ে দিয়ে অকস্মাৎ একটা অজানা শক্তির অস্তিত্ব ধরা দিল। তার বিকিরণকে নাম দেওয়া হল মহাজাগতিক রশ্মি; কস্মিক রশ্মি। বলা যেতে পারে আকস্মিক রশ্মি। কোথা থেকে আসছে বোঝা গেল না কিন্তু দেখা গেল সর্বত্রই। কোনো বস্তু বা কোনো জীব নেই যার উপরে এর করক্ষেপ চলছে না। এমন-কি; ধাতুদ্রব্যের পরমাণুগুলোকে ঘা মেরে উত্তেজিত করে দিচ্ছে। হয়তো এরা জীবের প্রাণশক্তির সাহায্য করছে, কিংবা বিনাশ করছে – কী করছে জানা নেই, আঘাত করছে এইটেই নিঃসংশয়।
এই যে ক্রমাগতই কস্মিকরশ্মি-বর্ষণ চলেছে এর উৎপত্তির রহস্য অজানা রয়ে গেল। কিন্তু জানা গেছে বিপুল এর উদ্যম, সমস্ত আকাশ জুড়ে এর সঞ্চরণ, জলে স্থলে আকাশে সকল পদার্থেই এর প্রবেশ; এই মহা আগন্তুকের পিছনে বিজ্ঞানের চর লেগেই আছে, কোন্ দিন গোপন ঠিকানা ধরা পড়বে।
অনেকে বলে কস্মিক আলো আলোই বটে, র্যন্ট্গেন রশ্মির চেয়ে বহুগুণে জোরালো। তাই এরা সহজে পুরু সীসে বা মোটা সোনার পাত পার হয়ে চলে যায়। বিজ্ঞানীদের পরীক্ষায় এটুকু জানা গেছে এই আলোর সঙ্গে আছে বৈদ্যুতকণা। পৃথিবীর যে ক্ষেত্রে চৌম্বকশক্তি বেশি এরা তারই টানে আপন পথ থেকে সরে গিয়ে মেরুপ্রদেশে জমা হয়, তাই পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় কস্মিক রশ্মির সমাবেশের কমিবেশি দেখা যায়।
কস্মিক রশ্মির সম্বন্ধে এখনো নানা মতের আনাগোন চলেইছে। পরমাণুর নূতন তত্ত্বের সূত্রপাত হওয়ার পর থেকেই বিজ্ঞানমহলে মননের ও মতের তোলাপাড়ার অন্ত নেই, বিশ্বের মূল কারখানার ব্যবস্থায় ধ্রুবত্বের পাকা সংকেত খুঁজে বের করা অসাধ্য হল। নিত্য বলে যদি কিছু খ্যাতি পেতে পারে তবে সে কেবল এক আদিজ্যোতি, যা রয়েছে সব-কিছুরই ভূমিকায়, যার প্রকাশের নানা অবস্থান্তরের ভিতর দিয়ে গড়ে উঠেছে বিশ্বের এই বৈচিত্র্য।